Football

অভাবের মধ্যেও অনূর্ধ্ব ১৭ জাতীয় ফুটবলের ট্রায়ালে রায়গঞ্জের প্রীতিকা বর্মন

রায়গঞ্জের এই অভাবী ঘরের মেয়ে অনূর্ধ্ব ১৭ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের ট্রায়ালে সুযোগ পেয়ে গত ৬ জুলাই সকালে বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে বেঙ্গালুরুর উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছে

বিদ্যুৎ ভৌমিক। ১১ই জুলাই ২০২৫। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে শত অভাব দরজায় প্রতিনিয়ত কড়া নাড়ে ।তবুও উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের হাতিয়া হাইস্কুলের নবম শ্রেণীতে পাঠরতা প্রীতিকা বর্মনের কঠিন জেদ আর ইচ্ছাশক্তির কাছে অভাবও হার মানতে বাধ্য হয়েছে।খুবই আনন্দের কথা, রায়গঞ্জের এই অভাবী ঘরের মেয়ে অনূর্ধ্ব ১৭ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের ট্রায়ালে সুযোগ পেয়ে গত ৬ জুলাই সকালে বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে বেঙ্গালুরুর উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছে ।তবে তার এই উড়ান মোটেই সহজ ছিল না ।তার জন্য তাকে কম মেহনত করতে হয় নি।ফুটবলের প্রতি আনুগত্যই তাকে জিতিয়ে দিয়েছে ।প্রীতিকা কথা রেখেছে।

সূত্রের খবর,প্রীতিকার বাবা কাশীনাথ বর্মনের স্থায়ী রোজগারের কোন  নিশ্চয়তা ছিল না ।কখনো সখনো অপরের টোটো চালিয়ে অতি কায়ক্লেশে সংসার চালান ।কাশীনাথবাবুর স্ত্রী ছাড়াও দু' ছেলে ও তিন মেয়ে ।এতগুলো মানুষকে প্রতিপালিত করা সামান্য রোজগারে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না, তা সহজেই অনুমেয়। ফলে চরম আর্থিক সংকটের মধ্যেও প্রীতিকাকে অসম লড়াইয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে ছোটবেলা থেকেই ।তবে তার ফুটবলের প্রতি একনিষ্ঠ আত্মত্যাগই তাকে জাতীয় মহিলা ফুটবলের প্রশিক্ষণ শিবিরে ডাক পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে, বলাই বাহুল্য ।এর ফলে ফুটবলের প্রতি তার আত্মবিশ্বাসও বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে ।এ প্রসঙ্গে প্রীতিকা জানায় : ছোটবেলায় বুঝেছিলাম, অভাবের কথা কাউকে বলে কিছু হবে না ।খেলতে যে পরিমাণ শারীরিক কসরত করতে হয়, সে তুলনায় পুষ্টিকর খাবার কোনদিনই  জোটেনি।কিন্তু সে সব কথা কোনও দিন  ভাবিনি ।মন দিয়ে পরিশ্রম করে গেছি।তার এই নিষ্ঠাসহকারে কায়িক পরিশ্রমের ফল সে হাতেনাতে পেয়েছে।প্রীতিকার মা পুতুল বর্মন জানান যে, প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ফুটবল খেলার প্রতি ওর প্রচন্ড ঝোঁক আর অদম্য ভালোবাসা দেখা গেছে ।এত বছরের পরিশ্রমের ফলে মেয়ে এবার জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছে।এ কম কথা নয় ।আগামী দিনে মেয়ে আরও ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে সক্ষম হবে বলে তিনি একশ শতাংশ ঘোর বিশ্বাসী।

বেঙ্গালুরু যাওয়ার আগের দিন রায়গঞ্জের নুরপুর হাইস্কুলের মাঠে অনুশীলনকালে তার স্বপ্নের উড়ানের খবর বলে।তখনই সে তার প্রতিক্রিয়ায়  জানায় যে, এবারই আসল পরীক্ষা।এই পরীক্ষায় সফল হতেই হবে বলে প্রীতিকা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ।প্রীতিকার স্কুলের শিক্ষকরা ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অরিজিৎ ঘোষ   ছাত্রীর হাতে যাতায়াতের ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ৪০ হাজার টাকা তুলে দেন ।হাতিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিরুদ্ধ সিনহা জানালেন যে,আমার স্কুলের অত্যন্ত গরিব পরিবারের মেয়ে প্রীতিকার জাতীয় ফুটবল দলে ট্রায়ালের সুযোগ পাওয়া আমাদের জন্য খুবই গর্বের বিষয় ।আর জানা যায় যে, প্রীতিকার বোন লতিকাও ফুটবলের প্রতি যথেষ্ট আগ্রহী।দিদির জাতীয় ফুটবল টিমে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাওয়ার গৌরবে তার মনেও উৎসাহের মাত্রা  ছাড়িয়ে গেছে ।সেও ফুটবলকে ঘিরে সাফল্য জিতে নিতে চায় ।তবে রায়গঞ্জের ক্রীড়ামোদী আমজনতা তাদের ঘরের মেয়ের ভবিষ্যতে অভাবনীয় সাফল্যের আশায়  দিন গুনছেন ।
ছবি  : সংগৃহীত ।

Advertisement