Football

প্রিমিয়ার লিগে মোহনবাগানকে নাস্তানাবুদ করে জয়ের নায়ক আসানসোলের মহম্মদ আমিল নইম

কলকাতা লিগের আবির্ভাব লগ্নে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ক্লাব শিবিরে আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি করে জয়ের নায়ক বনে গেলেন ২১ বৎসর বয়সী আসানসোলের গরিব ঘর থেকে উঠে আসা মহম্মদ আমিল নইম

বিদ্যুৎ ভৌমিক । ২রা জুলাই ২০২৫ ।  কলকাতা লিগের আবির্ভাব লগ্নে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ক্লাব শিবিরে আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি করে জয়ের নায়ক বনে গেলেন ২১ বৎসর বয়সী আসানসোলের গরিব ঘর থেকে উঠে আসা মহম্মদ আমিল নইম । তাঁরই করা একমাত্র গোলে নৈহাটি স্টেডিয়ামে মোহনবাগান একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে বিপর্যস্ত । হওয়ার কোন কথা ছিল না । কারণ ক্রীড়ামোদী সকলেই ভেবেছিলেন মোহনবাগানের পালতোলা নৌকো  তরতরিয়ে এগিয়ে যাবে। হলো তার উল্টো । স্তব্ধ হয়ে গেছে নৌকো।মোহনবাগান পরাজিত ।

সূত্র মারফৎ জানা যায় যে, আসানসোলের উঠতি উইঙ্গার নইমের বাবা মহম্মদ নইমুল হক গাড়ির গ্যারাজে মিস্ত্রির কাজে যুক্ত । তাতে কোনও রকমে সংসার সামলাতে হয় । অভাবের জ্বালায় তিতিবিরক্ত বাড়ির লোকেরা । কারণ  অভাব অনটন দরজায় প্রতিনিয়ত কড়া নাড়ে । আর এই অর্থ সংকটের জন্যই নইমের ওপরের তিন দাদার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনাশপ্রাপ্ত হয়েছে। এমন কি অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য নইমের বাবা নইমকে খেলার সাজ সরঞ্জাম কিনে দিতে অপারগ । তবুও নইম কিন্তু  লড়াইয়ের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়ার ছেলে নই।তিনি কঠিন লড়াইয়ে টিকে থেকে বুঝেছিলেন যে , তাঁর লড়াই তাঁকেই মোকাবিলা করতে হবে । প্রশিক্ষক উত্তম স্যারের কাছে প্র্যাকটিস করার সাথে সাথে এলাকার বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে যে টাকা  জোগাড় হতো, তা দিয়েই বুট ও জার্সি কিনে নিতেন।সেই সঙ্গে মনে স্বপ্ন দেখতেন যে , কলকাতার প্রিমিয়ার লিগে দুরন্ত ফুটবল খেলে আইএসএলে যোগ দিতে হবে। নইম বুঝে গিয়েছিলেন, বাবার পক্ষে আমাকে খেলার সাজসরঞ্জাম কিনে দেওয়া সম্ভব নয় ।সে কারণেই প্রচুর প্রতিযোগিতায় খেলতাম ।সেই টাকা দিয়েই নিজের প্রয়োজন মেটাতাম।

ফুটবলকে ভালোবেসেই ফুটবলের মক্কা কলকাতার টানে কালীঘাট এম এস দলে ট্রায়াল দিতে কলকাতায় এসেছিলেন নইম । তারপর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি । গত মরশুমে কালীঘাটে খেলে এবারে পুলিশ এ সি- তে নাম লিখিয়েছেন । পুলিশ দলে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে একটা চমকপ্রদ ও নজরকাড়া সত্য ঘটনা ঘটে । এ বিষয়ে পুলিশ এ সি দলের সহকারী কোচ সুমন দাস জানালেন যে, গত বছরের নভেম্বর মাসে আসানসোলের এক প্রতিযোগিতায় আমরা অংশ নিয়েছিলাম । সেই কম্পিটিশনে সেমিফাইনালে আমরা দু' গোলে পেরেছিলাম। বিপক্ষ দলের দুটো গোলই করেছিল নইম । সে দিনই ওর ফোন নম্বর জোগাড় করি।তারপর থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতাম ।কারণ আমার লক্ষ্য ছিল, নইমকে পুলিশ এ সি দলে সই করানো।তিনি আরো জানান যে, নইমের মতো আরও কয়েকজন প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন ফুটবলার রয়েছে আমাদের টিমে । ওরাই নিজেদের প্রমাণ করবে ।

মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ক্লাবকে পরাজিত করে পুলিশ এ সি দলের দুরন্ত জয়ের নায়ক নইম উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বললেন যে, মোহনবাগান ম্যাচে আরও গোল হতে পারত। তা নিয়ে তাঁর কোন অনুশোচনা নেই । দারুণ আনন্দ হচ্ছে মোহনবাগানের মতো জাতীয় দলের বিরুদ্ধে গোল করতে পেরে। আমার স্বপ্ন একদিন আইএসএলে খেলা। মোহনবাগানের বিপক্ষে খেলতে নেমে নইম কোন চাপের শিকার হন নি। বললেন, ম্যাচের আগে একেবারেই চাপে ছিলাম না । আমাদের কোচ বলে দিয়েছিলেন যে, যে কোনও মূল্যে তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়তে হবে । তাই জেতা ছাড়া অন্য কিছু আমাদের মাথাতেই ছিল না । তবে নইম একেবারে নির্বাক নির্বিকার । কারণ এখনও যে তাঁর অনেক স্বপ্ন পূরণ হতে বাকি ।

Advertisement