Football

বিশ্বকাপকে পাখির চোখ করেছেন ভারতের মহিলা ফুটবলার আলিপুরদুয়ারের অঞ্জু তামাং

আগামী বৎসরে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান কাপে প্রথম ছয়ের দলে থাকতে পারলেই ভারতের মেয়েরা সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে ।এমন কি  ৭ কিংবা  ৮ নং স্থানে থাকলেও প্লে- অফে সুযোগ মিলতে পারে বিশ্বকাপে খেলার ।এমন সুবর্ণ সুযোগ কোনভাবেই নাগালের বাইরে চলে যেতে দিতে নারাজ ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের অন্যতম সদস্যা আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়ার ফুটবলার অঞ্জু তামাং

বিদ্যুৎ ভৌমিক। ২০ শে জুলাই ২০২৫। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভারতের মহিলা ফুটবলাররা স্বপ্নের ফুটবল খেলে অস্ট্রেলিয়ায় মেয়েদের এএফসি এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ইতিহাস গড়লো ।উৎসবের আবহে খুশির ফুরফুরে মেজাজে ভারতীয় মহিলা ফুটবলাররা সেই কঠিন লড়াইয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে নিজেদের গড়ে তুলছেন ।কারণ আগামী বৎসরে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান কাপে প্রথম ছয়ের দলে থাকতে পারলেই ভারতের মেয়েরা সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে ।এমন কি  ৭ কিংবা  ৮ নং স্থানে থাকলেও প্লে- অফে সুযোগ মিলতে পারে বিশ্বকাপে খেলার ।এমন সুবর্ণ সুযোগ কোনভাবেই নাগালের বাইরে চলে যেতে দিতে নারাজ ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের অন্যতম সদস্যা আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়ার ফুটবলার অঞ্জু তামাং ।তবে একথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে, এশিয়ান কাপে ভারতকে তোলার মূলে কোচ ক্রিসপিন ছেত্রী ছাড়াও যাদের অবদান অনস্বীকার্য, তাদের মধ্যে পশ্চিমবাংলার তিন মহিলা ফুটবলার আছেন ।সর্বোপরি জোড়া গোল করা কল্যাণীর সঙ্গীতা বাসফোর , তেহট্টের হাঁসপুকুরিয়ার রিম্পা হালদার ও  আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়ার মেয়ে কালিম্পংয়ে বড় হওয়া অঞ্জু তামাং ।এরা না থাকলে মনে হয় ভারতীয় মহিলা ফুটবল দল এশিয়ান কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারতো না।

এবার ফুটবলার অঞ্জু তামাংয়ের  কথায় আসি । অঞ্জু তামাং আদতে আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়ার মেয়ে ।ভারতের মহিলা ফুটবল দলের এই খেলোয়াড় বর্তমানে পাটনায় রেলদপ্তরে জুনিয়র ক্লার্কের চাকরিতে যোগদান করেছেন কয়েক বৎসর হলো।তিনি তাঁর ফুটবল জীবনের ৮ বৎসরের মধ্যে স্বপ্নের অগাধ মায়াজাল বুনেছেন ।কথাপ্রসঙ্গে তিনি জানান যে, আমার বাড়ি আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়ার উত্তর রঙ্গালিবাজনা বস্তিতে ।সেখানে না আছে যাতায়াতের ভালো ব্যবস্থা, না আছে স্কুল ।ফলে সামান্য চাষবাস করে পেট চালানোয় অসুবিধে হওয়ায় আমার বাবা খুব ছোটবেলায় আমাকে কালিম্পংয়ে দিদি জামাইবাবুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।দিদির বাড়িতেও চাষের কাজ, গরু চরানো,মুরগি পালনের ফাঁকেই আমার লেখাপড়া ও খেলাধুলো চলত।ছেলেদের সঙ্গেই ফুটবল খেলেছি স্রেফ আনন্দ পেতে ।কলকাতায় খেলব, বাংলার প্রতিনিধিত্ব করব কিংবা ভারতের জার্সি পরবো কোন দিন এমন স্বপ্ন দেখিনি।অথচ এই ফুটবল খেলেই নির্বাচকমণ্ডলীর চোখে পড়ে যাওয়ার কারণে দেশের জার্সি গায়ে তোলার স্বপ্ন সার্থক হয়েছে অঞ্জুর।তিনি বিগত২০১৭ সাল থেকে ভারতের মহিলা ফুটবল দলের ৯ নং জার্সি গায়ে চাপিয়ে টানা আট বছর জাতীয় দলে খেলে চলেছেন ।বললেন, গত ৬ মাস ধরে ভারতীয় টিমের শিবিরে আমাদের পাখির চোখ বিশ্বকাপে খেলা।জানি, কাজটা কঠিন।কিন্তু আমরা আত্মবিশ্বাসী।

ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলে খেলার সাথে সাথে কলকাতার ইষ্টবেঙ্গল ক্লাবে সেরা পারফরম্যান্স উজাড় করে নিজের দলকে আই ডব্লিউ এলে জয়ের বিশেষ ভূমিকায় তিনি পারঙ্গম ছিলেন ।তবে তাঁর চাকরি নিয়ে তিনি সমস্যার বেড়াজালে ।বললেন, রেলের চাকরিতে শুধু মাত্র জাতীয় টিমের খেলার সময় ছুটি পাই।প্র্যাকটিস সেসন অথবা ইষ্টবেঙ্গল ক্লাবের হয়ে খেলার জন্য ছুটি পাই না ।আবার গরিব পরিবারের মেয়ে বলে চাকরি ছাড়ার কথাও ভাবতে পারি না ।তবে তিনি এ ব্যাপারে পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর ভরসা রাখছেন ।তিনি আরও জানান যে, দিদি তো রাজ্যের অনেক খেলোয়াড়দের চাকরি দিয়েছেন।তিনি  ( মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় )যদি আমাকে চাকরি দেন, তাহলে ক্লাব ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করার জন্য সবরকম কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতেও রাজি।তবে পাহাড়ী মেয়ে ফুটবলারের এই আশা বাস্তবে ফলপ্রসূ হবে কি? এমনই প্রশ্নচিহ্নের মুখোমুখি আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়ার মেয়ে অঞ্জু তামাং।
ছবি  : সংগৃহীত ।

Advertisement