ফুটবল
দুঃস্থ মানুষের কল্যাণে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নপূরণে রেলওয়ে এফ -র ডিফেন্ডার হরেরাম মুর্মু
হরেরাম মুর্মু প্রচন্ড জেদের বশবর্তী হয়ে বর্তমানে কলকাতার রেলওয়ে এফ সি দলে খেলার সুযোগ লুফে নিয়ে স্বপ্নপূরণ সার্থক করেছে

বিদ্যুৎ ভৌমিক, ২৭ শে জুলাই : মাটির দেওয়াল টিনের ছাউনি দেওয়া এক চিলতে ঘর।দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে অভাবই এদের নিত্যসঙ্গী । সেই হতদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা আদিবাসী সম্প্রদায়ের তরুণ প্রজন্মের তুখোড় ও লড়াকু চেহারার হরেরাম মুর্মু প্রচন্ড জেদের বশবর্তী হয়ে বর্তমানে কলকাতার রেলওয়ে এফ সি দলে খেলার সুযোগ লুফে নিয়ে স্বপ্নপূরণ সার্থক করেছে। রেলওয়ে এফ সি দলের এই ডিফেন্ডার হরেরামের ফুটবলই ধ্যান জ্ঞান । ফুটবল খেলার পাশাপাশি লেখাপড়া তার জীবনের সঙ্গী বলা যায় । আগামী দিনে সে পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে ধন্য হতে চায় ।
পুরুলিয়া জেলার প্রত্যন্ত আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম গিতিংলহর। এই গ্রামের অবস্থান এমনই যে মানুষের বিপদে আপদে কাছাকাছি কোন ডাক্তার বা ওষুধের দোকান নেই । মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে ১০ কিলোমিটার পথ উজিয়ে বলরামপুর গ্রামীণ হাসপাতালেই তাদের প্রাণভোমরার সন্ধান মেলে । তাই গ্রামের আদিবাসী মানুষজনের বিপদের দিনে পাশে দাঁড়াতে তাদের অসহায়তা দূর করার তাগিদে গ্রামের ছেলে হরেরামের চোখের তারায় চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন সাধ জাগে । সে কারণে খেলার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিট পরীক্ষার মস্ত বড় বাধা পেরোনোর সংকল্পে বিভোর হরেরাম মুর্মু । গ্রামের স্কুলে তার প্রাথমিক শিক্ষা । সেখান থেকে পরীক্ষায় বসে এখন একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে পদার্পণ । পড়াশুনার পাশাপাশি বাকসা ফুটবল অ্যাকাডেমিতে ফুটবল প্র্যাকটিস । তার ক্রীড়াচাতুর্যের গুণে স্কুলের শিক্ষকরা মুগ্ধ । কলকাতার ক্লাবে ট্রায়াল দিয়ে খেলায় সুযোগ পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয় ।
কিন্তু সুদূর পুরুলিয়া জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রত্যেক দিন কলকাতা যাতায়াত করা মোটেই সম্ভব বা সহজ নয় । তাই হরেরামের ঠাঁই জুটেছে বাকসার ফুটবল অ্যাকাডেমির হোস্টেলে। সেখানে ফুটবল, জার্সি,বুট ছাড়াও পড়াশুনার জন্য ব্যাগভর্তি বই।বিকেলে খেলা থাকলে বা প্র্যাকটিসের পর ক্লান্ত হয়ে দুচোখ জুড়ে ঘুম জড়িয়ে আসে। এত পরিশ্রমেরপর ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দেওয়া ছাড়া আর কি হওয়ার আছে ? তবুও মনে স্বপ্ন জেগে থাকে । অনেক রাত পর্যন্ত বাকসার ফুটবল অ্যাকাডেমির ছোট্ট ঘরে টিমটিমে বাল্বের আলোয় ঘুমচোখে পড়াশুনায় মগ্ন হরেরাম । কর্মকর্তারা দেখে হতবাক । বিছানা জুড়ে ছড়ানো ছিটানো বইপত্তর । হরেরাম জেগে নোটের খাতায় চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে। হরেরাম জানায় : ঘুমিয়ে পড়লে ডাক্তার হতে পারব না । তাহলে আমি আমার গ্রামের গরিব বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে না পারলে স্বপ্ন সার্থক হবে না। লাল টুকটুকে স্বপ্ন হাতুড়ির আঘাতে গুঁড়িয়ে দিতে চায় সব প্রতিকূলতা।কিন্তু সব প্রতিবন্ধকতার আগল টপকে হরেরাম তার অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে বীরদর্পে । অভাবনীয় সাফল্য সে তুলে আনবেই।
ছবি : সংগৃহীত ।

Comments