Football

নজির গড়ে এশিয়ান কাপে ভারতকে তোলার মূলে কোচ ক্রিসপিন ছেত্রী

ভারতের মেয়েরা এই প্রথম এএফসি এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ক্রীড়ামহলে সাড়া জাগিয়েছে

বিদ্যুৎ ভৌমিক । ১০ ই জুলাই ২০২৫। কার্সিয়াংয়ের মেয়ে এক সময়ে কলকাতা ময়দানে মোহনবাগান ও ইউনাইটেড স্পোর্টস দলে খেলে বর্তমানে ভারতীয় মহিলা ফুটবল টিমের কোচ ক্রিসপিন ছেত্রীর নাম সংবাদের শিরোনামে আবার উঠে এলো । যে কিনা মাত্র  পাঁচ মাস সময়েই  ভারতীয় মহিলা ফুটবল টিমকে কোচিং করিয়ে নজির স্থাপন করে ভারতকে এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করিয়ে হিম্মত দেখালেন । অথচ এর পরও তাঁর মধ্যে কোন আনন্দ উচ্ছ্বাস বা অহঙ্কার দেখা যায় নি । থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই শহর থেকে দেশে ফেরার পথে জানালেন, আজ এই সাফল্যে ভীষণভাবে মনে পড়ছে তিন জনের কথা --অমল (দত্ত ) স্যর, বাবলুদা ( সুব্রত ভট্টাচার্য  ) আর শ্যাম থাপার কথা । ফুটবল জীবনে এঁদের কাছে যেটা শিখেছি, সেটাই এখন কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি।আমাদের দেশে যখন বিদেশি কোচ ও খেলোয়াড়দের রমরমা, তখন কিন্তু ক্রিসপিন অমল দত্ত, সুব্রত ভট্টাচার্য ও শ্যাম থাপার মধ্যে ডুবে আছেন । বললেন, টিভিতে কাউকে দেখে তো আর আদর্শ করা যায় না ।আর আমাদের দেশে যে সব বিদেশিরা কোচিং করাচ্ছেন, তাঁরা তো চরম পেশাদার । অমল স্যরদের কাজের মধ্যে অসম্ভব ভালোবাসা আর আবেগ ছিল ।আমি আমার কোচিংয়ে সেটাই কাজে  লাগাচ্ছি।

ভারতের মেয়েরা এই প্রথম এএফসি এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ক্রীড়ামহলে সাড়া জাগিয়েছে । ক্রিসপিন জানান যে, আমি ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের মেয়েদের  দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেখছি আমার মেয়েরা সকালে ঘুম থেকে উঠে বলে, বিশ্বকাপে খেলবে, রাতে ঘুমিয়েও বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন  দ্যাখে । আমি ওদের এই লক্ষ্যটা বাস্তবায়িত করার চেষ্টা  করছি । মনে হয়, সেটা সম্ভবও । যতদূর মনে পড়ে, বাংলার কোন অনামী কোচ ইতিপূর্বে ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের জাতীয় টিমকে এশিয়ান কাপে খেলার সুযোগ করে দিয়েছে বলে জানা নেই । সেদিক দিয়ে অনুধাবন করলে বাংলার কোচ ক্রিসপিন ছেত্রীই এই প্রথম ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের দায়িত্ব নিয়ে দেশকে এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার স্বপ্নপূরণকে  বাস্তবায়িত করলেন । এ কারণে ক্রিসপিনের আত্মবিশ্বাসকে কুর্নিশ জানাতে দ্বিধা নেই ।তিনি বললেন, আমি দেশে ফিরেই এআইএফএফের কর্তাদের কাছে অনুরোধ করব, এশিয়ান কাপের আগে যত বেশি সম্ভব ইওরোপ ও আফ্রিকান দেশের বিরুদ্ধে আমাদের প্র্যাকটিস ম্যাচের ব্যবস্থা করতে ।কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন যে, ইওরোপের দেশগুলোর বিরুদ্ধে আমরা টেকনিকের আর আফ্রিকার দেশগুলোর বিরুদ্ধে শক্তির মোকাবিলা করতে শিখব।আর তাতেই এশিয়ান কাপে কোরিয়া, চিন, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোকে সামলানো যাবে ।

দেশের কথা মাথায় রেখেও বাংলার ফুটবল নিয়ে ক্রিসপিন ছেত্রীর ভাবনার শেষ নেই । তিনি বললেন, বাংলায় যে ভালোমানের মেয়ে ফুটবলার আছে তার জ্বলন্ত প্রমাণ সঙ্গীতা বাসফোর , অনুজ তামাং ও রিম্পা হালদাররা । বাংলার ক্লাবেরা যদি কলকাতা লিগে ভিন্ রাজ্যের ফুটবলার না এনে শুধু স্থানীয়দের সুযোগ দেয়, তাহলে আরও বাংলা থেকে প্রতিভাসম্পন্ন  মেয়ে উঠে  আসবে । ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের কোচ ক্রিসপিন ছেত্রীর এই মূল্যবান চিন্তাধারায় ফুটবল জগতের কর্তাব্যক্তিদের ঘুম ভাঙবে কিনা সন্দেহ!
ছবি : সংগৃহীত ।

Advertisement