Football
এশিয়ান কাপে ভারত, সৌজন্যে জোড়া গোল সঙ্গীতা বাসফোরের
প্রথমবার মহিলা এএফসি এশিয়ান কাপের ফুটবলে ভারত মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে

বিদ্যুৎ ভৌমিক। ৭ই জুলাই ২০২৫। গত ৫ জুলাই থাইল্যান্ডের চিয়াং মাইতে স্বপ্নপূরণের রাতে প্রথমবার মহিলা এএফসি এশিয়ান কাপের ফুটবলে ভারত মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ক্রীড়াঙ্গনে সাড়া জাগিয়েছে ।তাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২- ১ গোলে জেতার প্রধান হোতা বাংলা তথা কল্যাণীর মেয়ে ২৮ বৎসর বয়সী দুরন্ত সঙ্গীতা বাসফোর।তবে তিনি জোড়া গোল করে চোখের জলে বুক ভাসিয়েছেন।এ কান্না আনন্দের, ইতিহাস গড়ার ও দেশকে গর্বিত করার।
সূত্র মারফৎ জানা যায় যে, সঙ্গীতা বাসফোরের বাবা কয়েক বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন ।মা ফুলঝুরি বাসফোর কল্যাণীর গান্ধী হাসপাতালের সাফাইকর্মী ।মেয়ের জোড়া গোল করার সুসংবাদে ( সঙ্গীতাই মাকে ফোনে জানিয়েছেন, মা জিতেছি )মা ফুলঝুরি আনন্দে উচ্ছ্বসিত ।অথচ একটা সময় মেয়ের ফুটবল খেলা নিয়েই তাঁর যতো চিন্তা ভাবনা ।জানালেন, ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহ ছিল ওর। কিন্তু যখন বড় হচ্ছিল তখন আমি চিন্তায় ছিলাম ।মেয়ে আবার ফুটবল খেলে নাকি ? তাও আবার শর্টস পরে ? লোকে কী বলবে! কিন্তু আমার প্রতিবেশীরাই বলেছিল, ও খেলবে ।আমরা আপত্তি করিনি।তারপর থেকে ওই চিন্তা চলে গিয়েছে।এখন ভালো লাগছে যে সবাই মেয়ের প্রশংসা করছে।আরও জানা যায় যে, কল্যাণী গান্ধী হাসপাতালের কোয়ার্টার মাঠেই সঙ্গীতার ফুটবলে হাতেখড়ি ।তাঁর কোচ বিজয় বাসফোর ( এক সময় মোহনবাগান ও মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে দাপিয়ে খেলেছেন ) বললেন, সঙ্গীতা আমার দূর সম্পর্কের ভাগ্নি হয়।আমি ওই কোয়ার্টারের মাঠে আমরা কজন ক্লাবের ফুটবল প্র্যাকটিস করাচ্ছিলাম।দেখি ছোট্ট সঙ্গীতা বলে লাথি মারছে।বুঝলাম ফুটবল খেলতে পারে।বাড়িতে কথা বলে দলে নিয়ে নিলাম ।ছেলেদের সঙ্গেই খেলত।মেয়ে বলে আলাদা করে কম অনুশীলন করাই নি।ছেলেরা যা অনুশীলন করত, ও তাই করত। তবে ও মেয়ে হয়েও পাল্লা দিয়ে লড়ছিল।আজ ভালো লাগছে ওর এই কীর্তি দেখে।
বঙ্গ তনয়া সঙ্গীতার জোড়া গোলে ভারত এএফসি এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করায় আবেগপ্রবণ হয়ে খুবই উল্লসিত সঙ্গীতার আর এক কোচ প্রতিমা মন্ডলও।তিনি জানান যে, ২০০৬ কি ২০০৭সালে অনুশীলনে ওকে প্রথমবার দেখেই ভালো লেগে গেছিল।সে বছরই অনূর্ধ্ব ১৬ জাতীয় মহিলা ফুটবলে মণিপুরকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলা।অসাধারণ খেলেছিল সঙ্গীতা।ওর সবচেয়ে বড় গুণ হলো হার- না - মানা মানসিকতা ও শেখার ইচ্ছে ।প্রবল দারিদ্র্যের মধ্যেও ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেনি । প্রতিমা দেবী আরও জানান যে, সঙ্গীতা শুরু করেছিল ফরোয়ার্ড হিসেবে ।পরবর্তী কালে আক্রমণাত্মক মিড ফিল্ডার হিসেবে খেলতে শুরু করে ।খেলার ধরনও বদলে ফেলেছে।
তাইল্যান্ড ম্যাচে জেতা প্রসঙ্গে সঙ্গীতা জানালেন যে, এই অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না ।এই সাফল্য পুরো দলের সমবেত প্রচেষ্টার ফল।আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল এশিয়ান কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা।এখন আমাদের মূল লক্ষ্য হবে বিশ্ব কাপে যোগ্যতা অর্জন ।আমি মাঠে নেমেছি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জনের জন্য নয়, বিশ্ব কাপের যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে ।ক্ষীণ একটা সম্ভাবনা রয়েছে । এখন তার লক্ষ্য নিয়েই আরও কঠিন লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে ।জানা গেছে যে, এই প্রথমবার মেয়েদের এএফসি এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করায় সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন ভারতীয় দলের জন্য ৫০ হাজার মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছেন।ভারতের খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করার জন্য এই মহতী উদ্যোগ নিঃসন্দেহে নয়া দিগন্তের দরোজা খুলে দেবে বলে বিজ্ঞমহলের ধারণা ।

Comments