State Para Games
এক পা দিয়েই রাজ্য প্যারা গেমসে সাফল্যের নজির সুন্দরবনের আহম্মদ গাজীর
উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ক্রীড়াবিদ আহম্মদ গাজী সম্প্রতি কলকাতার সল্টলেকে আয়োজিত রাজ্য প্যারা ফেন্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে স্বর্ণ পদক ও রৌপ্য পদক অর্জন করে।

বিদ্যুৎ ভৌমিক, ১২ ই জুলাই : মানুষের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মধ্যে 'পা 'এমন একটি অঙ্গ যার অনুপস্থিতির কারণে সচল মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে, এমন কি চলাচলের শক্তি হারায়।কিন্তু এমনও বিরল ঘটনা ঘটেছে তার প্রভাব সারা বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ।উত্তর ২৪ পরগণার নামকরা সাঁতারু মাসুদুর রহমান দুটো পা ছাড়াই ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে শুধু বাংলা নয়, ভারতের সুনাম বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়ে নজির স্থাপন করেছেন।আর উত্তর ২৪ পরগণার সুন্দরবনের বিশেষভাবে সক্ষম ২৫ বৎসরের ক্রীড়াবিদ আহম্মদ গাজী একটি পায়ের সাহায্যে রাজ্য প্যারা গেমসে হুইলচেয়ার ফেন্সিংয়ে অভাবনীয় সাফল্য তুলে এনে নতুন পথের দিশা খুঁজে পেয়েছেন ।সে কারণে মাসুদুর রহমান ও আহম্মদ গাজীর মতো অদম্য সাহসী ক্রীড়াবিদদের কুর্নিশ জানানোর ভাষা জানা নেই ।
সূত্র মারফৎ জানা যায় যে, উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাট মহকুমার অন্তর্গত মিনাখাঁ ব্লকের অধীনস্থ চৈতল গ্রাম পঞ্চায়েতের চরপাড়ার ক্রীড়াবিদ আহম্মদ গাজী সম্প্রতি কলকাতার সল্টলেকে আয়োজিত রাজ্য প্যারা ফেন্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে স্বর্ণ পদক ও রৌপ্য পদক অর্জন করার গৌরবে গৌরবান্বিত হন।একটি পায়ের সাহায্যে তাঁর ক্রীড়াদক্ষতা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে ।রাজ্য প্যারা গেমসে তাঁর এই সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ এখন তাঁর একমাত্র লক্ষ্য, চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলার সুনাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা।আরও জানা যায় যে, আহম্মদ গাজী অত্যন্ত নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন।তাঁর অভাবী সংসারে বয়স্ক বাবা মা ছাড়াও দাদা ও বোন রয়েছে ।তাঁদের প্রতিপালনের দায় দায়িত্ব তাঁর ওপরে বর্তেছে ।সেজন্য বিশেষভাবে সক্ষম হয়েও তাঁকে সংসারের গুরুদায়িত্ব পালনের জন্য ইটভাটায় কাজ করতে হয়েছে ।তাছাড়া নদীতে মাছ ধরা তাঁর নিত্যনৈমিত্তিক কাজ বলা চলে।
কিন্তু বিপদ তাঁর পিছু ছাড়েনি।২০১৫ সালে আকস্মিক পথ দুর্ঘটনায় তাঁর একটি পা বাদ দিতে হয় তাতেও তিনি হেরে যাওয়ার পাত্র নন।এক পায়ের সাহায্যে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হেলায় উপেক্ষা করে জীবনযুদ্ধে লড়াইয়ে সম্মুখীন হয়েছেন ।সে কারণে পড়াশুনার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রয়োজনের তাগিদে তাঁকে মোটর ভ্যান চালাতে হয় ।একটি পায়ের সাহায্যে সাঁতার কাটা ও ফেন্সিংয়ের মতো কঠিন খেলায় দক্ষতার পরিচয় দেওয়া তাঁর নিরলস পরিশ্রমের ফসল বলা চলে।আহম্মদ গাজী জানান যে, তাঁরই নেতৃত্বে কেরালায় অনুষ্ঠিত ১২তম ন্যাশনাল ড্রাগন বোট চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটার ও ২০০ মিটার প্যারা ড্রাগন বোট রেসে বাংলা চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণ পদক লাভের শিরোপা লাভ করে ।সেজন্য তিনি বিশেষভাবে সক্ষম হয়েও আগামী দিনে চেন্নাইয়ে জাতীয় প্যারা ফেন্সিং চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে সেরার সম্মান পাওয়ার জন্য এখন থেকেই কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন যার সুবাদে বাংলার সুনাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায় ।
ছবি : সংগৃহীত ।

Comments