Athletic
আর্থিক ও শারীরিক দুরবস্থাকে উপেক্ষা করে আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্সে জোড়া পদক রানাঘাটের আতর আলির
সম্প্রতি নেপালে অনুষ্ঠিত 'ইন্দো-নেপাল যুব স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫ প্রতিযোগিতায় নদিয়ার উজ্জ্বল মুখ শারীরিক প্রতিবন্ধী আতর আলি ২০০ মিটার ও ৩০০ মিটার দৌড় ইভেন্টে সকল প্রতিযোগীদের পিছনে ফেলে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণ পদক লাভের অধিকারী হয়েছেন, যার দৌলতে দেশ গর্বিত

বিদ্যুৎ ভৌমিক । ২রা জুলাই ২০২৫ । গরিব ঘরেই প্রতিভার জন্ম হয় । সেই প্রতিভাকে নিজের সদিচ্ছার সঙ্গে পরিশ্রমের মিশেলে সমাজ জীবনে অভাবনীয় সাফল্য তুলে আনা যায় । সেখানে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও অভাব অনটন সাফল্যের পথে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়ায় না , তা আবারও প্রমাণ করে নিজের জাত চিনিয়ে দেশের মুকুটে নয়া পালক সংযোজিত করেছেন নদিয়া জেলার রানাঘাটের শ্রীনাথপুর গ্রামের লড়াকু অ্যাথলিট আতর আলি। সম্প্রতি নেপালে অনুষ্ঠিত 'ইন্দো-নেপাল যুব স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫ প্রতিযোগিতায় নদিয়ার উজ্জ্বল মুখ শারীরিক প্রতিবন্ধী আতর আলি ২০০ মিটার ও ৩০০ মিটার দৌড় ইভেন্টে সকল প্রতিযোগীদের পিছনে ফেলে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণ পদক লাভের অধিকারী হয়েছেন, যার দৌলতে দেশ গর্বিত । এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ২২ টি দেশের বাঘা বাঘা প্রতিযোগীরা অংশ নিয়েছিলেন ।
সূত্রের খবর, সংখ্যালঘু পরিবারের অর্থনৈতিক অনটন গোটা পরিবারকে ভাবিয়ে তুলেছে । কিন্তু বাড়ির ছেলে আতর ছোটবেলা থেকেই কোনও প্রশিক্ষক ছাড়াই অ্যাথলেটিক্সে নিজেই প্রশিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে গভীর মনোযোগ সহকারে অনুশীলনে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছেন । সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোনের মতো অবস্থা । এমতাবস্থায় পাড়ার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে হাত পেতে টাকা ধার করে খেলায় অংশগ্রহণ করার নেশা তাঁকে পেয়ে বসে ও তাঁর ক্রীড়াদক্ষতার পরিচয়ে সাফল্যও তুলে আনতে সমর্থ হয় । নিজের সাফল্য সম্পর্কে আতর জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকে আমার কোনও কোচ ছিল না । নিজে নিজেই সব শিখেছি।এই স্বর্ণ পদক পাওয়া আমার জীবনের বড় সাফল্য । দেশের জন্য পদক জিততে পেরে খুব ভালো লাগছে । ভবিষ্যতে আরও সাফল্য পেতে চাই। আরও জানা যায় যে, আতর ছোট বয়স থেকেই দিদির কাছে বড় হয়েছে। অভাবের তাড়নায় কম্পিটিশনের জন্য খরচ তুলতে পাড়ার মানুষজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন ।তবে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, রাজ্যের সরকার তাঁর পাশে দাঁড়াবেন ।এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মানবিক মূল্যবোধকে তিনি সম্মান করেন । তিনি আরও জানান যে, তাঁর একটা চাকরির বিশেষ দরকার ।তা না হলে যা ধারদেনা হয়েছে, তা শোধ করা অসম্ভব । আগামী দিনে হয়তো আর কোনও প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারব না ।
অ্যাথলিট আতর আলির সাফল্যে খুবই খুশি তাঁর বড় দিদি রহিমা বিবি। তিনি স্থানীয় একটি হাসপাতালে আয়ার কাজে যুক্ত। তিনি জানালেন, ভাইয়ের এই সাফল্যে যে কতটা আনন্দ হচ্ছে, তা বলে বোঝানো যাবে না । ছোটবেলা থেকে আতর যে পরিশ্রম করেছে, এটা তারই ফল।ভবিষ্যতে তাঁর একটাই লক্ষ্য, সাফল্যের এই ধারা বজায় রেখে আগামী দিনে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে আরও বড় কৃতিত্ব অর্জন করা।তবে এ ব্যাপারে সরকারি সাহায্য পেলে তাঁর মতো অনেক প্রতিভাবান অ্যাথলিটরা আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করে উজ্জ্বল প্রতিভায় প্রতিভাত হয়ে নিজেদের জাত চিনিয়ে অভাবনীয় সাফল্য তুলে এনে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পিছপা হবেন না ।

Comments