Athlete
অর্থাভাবে ন্যাশনাল কম্পিটিশনে অনিশ্চিত সোনাজয়ী শান্তিনিকেতনের প্রতিবন্ধী অ্যাথলিট সুস্মিতা সরকারের
গত ২৯ ও ৩০ জুন কলকাতার সল্টলেকে সল্টলেকের সাই কমপ্লেক্সে আয়োজিত বেঙ্গল প্যারালিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সুচারু ব্যবস্থাপনায় রাজ্য স্তরের অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ডিসকাস থ্রো, শটপাট ও জ্যাভলিন থ্রো ইভেন্টে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রতিযোগীদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মোকাবিলা করে তিনটি বিভাগেই প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণ পদক লাভের অধিকারিণী হয়েছেন সুস্মিতা সরকার

বিদ্যুৎ ভৌমিক । ৩রা জুুলাই ২০২৫ । গরিব হওয়া যে কি জ্বালা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন শান্তিনিকেতনের গৃহবধূ ৩২ বৎসর বয়সী অ্যাথলিট সুস্মিতা সরকার।তার ওপর ছোটবেলায় পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে একটা পা পক্ষাঘাতে পঙ্গু ।সে কারণে চলাফেরা করতে বেশ কষ্টভোগ করতে হয় ।তা সত্ত্বেও তাঁর সুপ্ত প্রতিভার বিকাশকে কোন বাধা কোনভাবেই স্তব্ধ করে দিতে পারে নি। তার প্রমাণস্বরূপ গত ২৯ ও ৩০ জুন কলকাতার সল্টলেকে সল্টলেকের সাই কমপ্লেক্সে আয়োজিত বেঙ্গল প্যারালিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সুচারু ব্যবস্থাপনায় রাজ্য স্তরের অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ডিসকাস থ্রো, শটপাট ও জ্যাভলিন থ্রো ইভেন্টে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রতিযোগীদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মোকাবিলা করে তিনটি বিভাগেই প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণ পদক লাভের অধিকারিণী হয়েছে ও ক্রীড়ামোদী আমজনতাকে তাঁর অসম সাহসী লড়াইয়ের কারণে চমকে দিয়েছে যা অতুলনীয় ।
সূত্র মারফৎ জানা যায় যে, রাঙামাটির বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনের সন্নিকটে ফুলডাঙার গৃহবধূ সুস্মিতা সরকার শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে চরমতম অভাবের সম্মুখীন হয়েও লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরে আসেন নি।এমন কি অভাবের তাড়নায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে আর পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারেন নি ।সংসারে আর্থিক অনটনকে উপেক্ষা করে খেলাধুলার ময়দান থেকে সরে যান নি। এমন কি বিবাহিত জীবনেও দুই ছেলে মেয়ে ও স্বামীকে পাশে নিয়ে খেলাধুলোর চর্চা করে চলেছেন আজও ।খেলার তাগিদে সপ্তাহে একদিন নলহাটিতে কোচ শেখ বদরুদ্দোজার অধীনে প্রশিক্ষণে রত থাকেন।আরও জানা যায় যে,তাঁর স্বামী মিঠু সরকারকে ঠেলা গাড়িতে করে খেলনা পুতুল বিক্রি করে অতি অল্প উপার্জনে ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার খরচ জুগিয়ে অতি কায়ক্লেশে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয় ।সুস্মিতার স্বামী মিঠু সরকার জানান যে,সব দিক সামলে ও যে সোনা জিতবে তা ভাবতে পারিনি ।ওর সাফল্যে স্বামী হিসেবে নিজে গর্ব অনুভব করছি।ও আরও এগিয়ে যাক্।
সুস্মিতার কোচ শেখ বদরুদ্দোজা ছাত্রীর সাফল্যে স্বভাবতই খুশিতে ভরপুর ।বললেন, অনমনীয় জেদই সুস্মিতার সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি ।জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় ও আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস ।কোচের এই বিশ্বাসকে সম্মান জানিয়ে নিজের প্রতি অগাধ বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও সুস্মিতার মনে কালো মেঘ দানা বেঁধেছে।তাঁর কথায় : জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারব কি না জানি না ।আমাদের মতো অভাবের সংসারে থেকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য যাতায়াতের খরচ কোথা থেকে আসবে ? এই কঠিন প্রশ্ন তাঁকে বিশেষ ভাবে ভাবিয়ে তুলেছে ।বোলপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পর্ণা বিশ্বাস সুস্মিতার সাফল্যে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত ।তিনি জানালেন যে, পুরসভার পক্ষ থেকে ওই ব্যাপারে সাহায্য করার কোনও সংস্হান নেই ।তবে তিনি যদি সাহায্য চান তাহলে অন্যভাবে কিছু করার চেষ্টা করবেন ।এখন দেখার বিষয় তাঁর এই অভাব কবে ঘুচে তাঁর মুখে হাসি ফুটবে।

Comments