Sanctuary
ত্রিপুরা সিপাহিজলা অভয়ারণ্যে জঙ্গলের রাজা দুটি সিংহের মৃত্যু ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য! বিষয়টি তদন্ত করার জন্য বনমন্ত্রীর নিকট দাবি এলাকাবাসীর
অভয়ারণ্যে একের পর এক পশু মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র চঞ্চল্য বিরাজ করছে গোটা অভয়ারণ্য জুড়ে। হতাশ পশুপ্রেমিরা

বিক্রম কর্মকার, জীবন সাহা ( ত্রিপুরা) : ভারতের ছোট্ট পার্বত্য ত্রিপুরা রাজ্যের গর্ব সিপাহীজলা অভয়ারণ্যে একের পর এক পশু মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র চঞ্চল্য বিরাজ করছে গোটা অভয়ারণ্য জুড়ে। হতাশ ত্রিপুরার পশুপ্রেমীরা। আশ্চর্যের বিষয় হলো সিপাহীজলা অভয়ারণ্যের কর্তৃপক্ষ একের পর এক পশু মৃত্যুর মূল রহস্য উদঘাটনের পরিবর্তে ড্যামেজ কন্ট্রোলে ব্যস্ত। নানা যুক্তি তারা তুলে ধরছে সংবাদ মাধ্যমের সামনে। গত এক পক্ষকালের মধ্যে চার বছর বয়সের দুটি পুরুষ সিংহ ও একটি প্রাপ্তবয়স্ক স্পটেড হরিণের মৃত্যু হয়েছে।
অভয়ারণ্যের খাদ্য সরবরাহকারী বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
সূত্রের খবর অনুযায়ী, সিপাহীজলা অভয়ারণ্যের খাদ্য সরবরাহকারী বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার অভয়ারণ্য কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় নেতৃত্বদের ম্যানেজ করে বছরের পর বছর অতি নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে চলেছে। যার খেসারত দিচ্ছে অবুঝ প্রাণীরা।অভিযোগ, বাঘ, সিংহকে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ কেজি তাজা মাংস দেওয়ার পরিবর্তে রুগ্ন ও অসুস্থ প্রাণীদের কম দামে সংগ্রহ করে মাংস সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে প্রাণীরা সুস্থ থাকার পরিবর্তে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভয়ারণ্যে একের পর এক পশু মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের বক্তব্য
অন্যদিকে, একের পর এক সিংহ ও হরিণের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিপাহিজলা অভয়ারণ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা: কেশব দেবনাথ জানান, সিংহের মৃত্যুগুলি অভয়ারণ্যের কর্তৃপক্ষের কাছে প্রত্যাশিত ছিল। চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো পশুর পিতা-মাতা যদি সম্পর্কে আপন ভাই বোন হয়ে থাকে তাহলে তাদের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া যেকোনো পশুর মধ্যে জেনেটিক্যাল ডিস অর্ডারের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
মিরো ও চিরো দুই সিংহ শাবকের মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য
গত ১৫ মে ও ২৫ মে চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া চার বছরের মিরো ও চিরোর পিতা-মাতা ছিল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের অন্তর্গত গত বছর ফেব্রুয়ারী মাসে পশ্চিমবঙ্গের নর্থ বেঙ্গল সাফারিতে পাঠানো রাম সীতা। তারা দু'জনেই ছিল সম্পর্কে ভাই বোন। চার বছর আগে রাম,সীতা, মিরো ও চিরুর সাথে আরও দুটি সিংহ শাবকের জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু, সিংহের ওই দুটি শিশু শাবক জন্মের পরেই মৃত্যুবরণ করে। ফলে মিরো ও চিরো দুই ভাই গত চার বছর ধরে সিপাহীজলা অভয়ারণ্যের কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বড় হতে থাকে তাদের শরীরে নানা সমস্যা থাকা সত্ত্বেও। মৃত্যুর আগে তাদের ওজন হয়েছিল প্রায় ১২০ কেজি এবং তাদের ঠিকানা ছিল ১৯ নম্বর এনক্লোজার। গত ৬ মে থেকে দুটি সিংহ শাবকেরই লো-ইমিউনিটির সমস্যা দেখা দেয় সিভিয়ার গ্যাস্ট্রাইটিসের কারণে দুটি সিংহ শাবকই কিছুদিন কিছু খেতে পারছিল না। ফলে অভয়ারণ্যের হাসপাতালে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে স্যালাইন সহ আনুষঙ্গিক ঔষধপত্র দেওয়া সত্ত্বেও শিডিউল ওয়ান ক্যাটাগোরির দুটি সিংহ শাবকের শেষ রক্ষা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ফলে, আর.কে নগর স্থিত ত্রিপুরা ভেটেরিনারি মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসকদের একটি দল সিপাহীজলা চিড়িয়াখানায় পৌঁছে মৃত সিংহের ময়নাতদন্ত শেষে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে হায়দ্রাবাদের একটি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে আরও বিশদ জানতে।
পশুপ্রেমিরা সোচ্চার
অন্যদিকে, ভারতীয় জু-অথরিটির নিয়ম অনুযায়ী রবিবার অভয়ারণ্যের ভেতরে একটি নির্দিষ্ট স্থানে মৃত সিংহটির দেহ আগুনে পোড়ানো হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নানাদিক তুলে ধরলেও সিপাহীজলা অভয়ারণ্যের ভেতর বছরের পর বছর অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করার ফলেই পশুরা দিনের পর দিন দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ। কিভাবে দুটি সিংহের মৃত্যু হয়েছে বিষয়টি তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ত্রিপুরার বনমন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মার নিকট দাবি তুলেছেন এলাকাবাসী।

Comments