Jagadhatri Puja 2024

ঐতিহ্যে, আলোকসজ্জায় ও লোককথায় অনবদ্য চন্দননগরের ২৫০ বছরেরও প্রাচীন জগদ্ধাত্রী পুজো

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো তার ঐতিহ্য বিশ্বসেরা। এই পুজো আড়াইশো বছর আগে কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরে শুরু হয়েছিল।

বাঙালি উৎসব প্রিয় জাতি, তাই বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। গত কয়েকদিন আগেই বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজো শেষ হয়েছে, তার রেস ছিল ভাই ফোঁটা পর্যন্ত, তবে সেই রেস কাটতে না কাটতেই আবারও বাঙালি মেতে উঠেছে উৎসবে। আর সেই উৎসবের নাম জগদ্ধাত্রী পুজো।

জগদ্ধাত্রী পুজো দুর্গা পূজোর মতো সারা বাংলা জুড়ে অত ধুমধাম করে না হলেও হুগলির চন্দননগরে তা কিন্তু ব্যাপকভাবেই প্রচলিত। হুগলির মানুষ সারা বছর অপেক্ষা করেন জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য। গোটা পৃথিবীর কাছে চন্দননগর শুধু জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্যই বিখ্যাত নয়, বিখ্যাত চন্দননগরের মনোমুগ্ধকর আলোকসজ্জার জন্য। আর সেই আলোকসজ্জা তথা জগধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করেই মন্ডপ গুলি সেজে ওঠে।

চন্দননগরের ঐতিহ্যবাহী পুজো গুলির অন্যতম দেবী বুড়িমার পুজো

রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন কৃষ্ণনগরের রাজা, আর রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরেই এই বাংলায় জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন হয়। আজও পূজোর সেই ঐতিহ্য বজায় রয়েছে কৃষ্ণনগরে। অর্থাৎ প্রায় আড়াইশো বছরেরও প্রাচীন এই ঐতিহ্যবাহী পুজো গুলি তার ঐতিহ্য আজও বজায় রেখে চলেছে। চন্দননগরে যে সমস্ত ঐতিহ্যবাহী পুজোগুলি হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো বুড়িমার পুজো। এই পুজো প্রায় ২৫০ বছরের প্রাচীন। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অনুযায়ী বুড়িমা খুবই জাগ্রত দেবী, তিনি সকলের মনস্কামনা পূর্ণ করেন, তাঁকে মন থেকে ডাকলেই তিনি সমস্ত অশুভের বিনাশ ঘটিয়ে শুভর সূচনা ঘটান। তাই বহু দূর থেকে অগণিত পুণ্যার্থী বুড়িমার দর্শন এর জন্য চন্দননগরে মায়ের কাছে ছুটে আসেন 

সিংহ বাহিনী, চতুর্ভূজা জগদ্ধাত্রী পূজার মূল আকর্ষণ আলোকসজ্জা 

চন্দননগর শুধুমাত্র বুড়িমার পুজোর জন্যই বিখ্যাত এমন কিন্তু নয়, কারণ চন্দননগরের মূল আকর্ষণ হল জগদ্ধাত্রী পুজোয় আলোকসজ্জা। জগদ্ধাত্রী পুজোর ষষ্ঠী থেকে শুরু হয় মন্ডপে মন্ডপে আলোকসজ্জা। আর অসাধারণ সাজে সজ্জিত এই মন্ডপ গুলির আকর্ষণে মানুষের ঢল নামে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত। 

কার্তিক মাসের শুক্লো নবমীতে দেবী জগদ্ধাত্রী পূজিতা হন প্রতিটি মন্ডপে। সেই দিন আসতে আর বেশি দেরি নেই - আগামী রবিবারই সেই নবমী তিথি। ইতিমধ্যেই আজ বুধবার অর্থাৎ ৬ নভেম্বর পঞ্চমী তিথি, তাই জাঁকজমক শুরু হয়ে গেছে প্রতিটি মণ্ডপে। জগদ্ধাত্রী পুজোর দশমী পড়েছে আগামী ১১ ই নভেম্বর সোমবার। এই জগতকে পালন করেন দেবী জগদ্ধাত্রী যিনি দেবী দুর্গার আর এক রূপ, তিনি সিংহ বাহিনী ও চতুর্ভূজা। 

জগদ্ধাত্রীর পুজোর প্রচলন কিভাবে শুরু হয়?

লোককথা অনুযায়ী জানা যায়, কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রকে দেবী জগদ্ধাত্রী, স্বপ্নাদেশ এ দেখা দিয়েছিলেন আর তারপর থেকেই কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরেই শুরু হয় দেবী জগদ্ধাত্রীর আরাধনা। পরবর্তী সময়ে ক্রমশ জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন বাড়ে গোটা চন্দননগর জুড়ে। হুগলির চন্দননগর দেবী জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য এবং আলোকসজ্জর জন্য পৃথিবী বিখ্যাত। এই পুজো বাঙালির সবথেকে বড় উৎসব দুর্গাপুজোর মতোই হয়ে থাকে।

সালটা ১৭৫৪, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন কৃষ্ণনগরের রাজা, তাঁকে নবাব আলীবর্দী খাঁ, ১২ লক্ষ টাকা নজরানা চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি সেই টাকা নবাব আলীবর্দী খাঁকে দিতে না পারায় তাঁকে বন্দী করেন আলীবর্দী খাঁ। বেশ কিছুদিন বন্দি থাকার পরে তিনি দুর্গাপুজোর নবমীর দিন মুক্ত হন। রাজাকৃষ্ণ চন্দ্রের ইচ্ছা ছিল তিনি কৃষ্ণনগরের ফিরে দেবী দুর্গার দর্শন করবেন, কিন্তু রাজা যখন ফেরেন তখন দশমী তিথি পড়ে গেছে এবং দেবী দুর্গার বিসর্জন হয়ে গেছে। তাই রাজা কৃষ্ণচন্দ্র আর দেবী দুর্গার দর্শন পাননি। 

সেই দিন রাতেই এক কিশোরী তাকে স্বপ্নে দেখা দেন এবং ধীরে ধীরে ওই কিশোরী চতুর্ভূজা সিংহ বাহিনী রূপে দেখা দিয়ে স্বপ্নের মধ্যেই মিলিয়ে যান। ওই দিনে রাজা স্বপ্নাদেশ পান, কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে চতুর্ভূজা সিংহ বাহিনীর পুজো করার। আর এর পরেই রাজা কৃষ্ণচন্দ্র, স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী, রাজরাজেশ্বরীর পূজা শুরু করেন আর এই পূজা পরবর্তী সময়ে ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাংলায়।