Modi - Trump Meeting

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ৪১ লক্ষ কোটি টাকার বাণিজ্য, অপরাধী প্রত্যার্পণ এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছাড়াও আর কি কি প্রাপ্তি হলো দিল্লির?

বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, অপরাধী প্রত্যার্পণ এবং প্রতিবেশী দেশ সম্পর্কে কি কি আলোচনা হল মোদী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে?

দুই রাষ্ট্রনেতা অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠক হয় প্রায় চার ঘন্টা ধরে, আর সেই বৈঠকে দীর্ঘ সময় কথা হয় দুই রাষ্ট্র নেতার মধ্যে। বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় অনুযায়ী ঠিক মধ্যরাতে দুই রাষ্ট্রপ্রধান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দীর্ঘ বৈঠক করেন।

দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকে উঠলো বাংলাদেশ প্রসঙ্গ 

হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে দীর্ঘ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। আর সেই বৈঠকে স্বাভাবিকভাবেই উঠে এসেছে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ। বাংলাদেশ নিয়ে মোদী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। আর বাংলাদেশের বিষয়টি ডোনাল্ড ট্রাম্প মোদীর উপরেই ছেড়ে দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া তিনি আরও বলেছেন যে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আমেরিকার কোন গুপ্ত ভূমিকা নেই।

দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকে দিল্লির কি কি প্রাপ্তি হলো?

নরেন্দ্র মোদী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকে দিল্লির ঝুলিতে এলো এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান। ভারতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পঞ্চম প্রজন্মের এফ-৩৫ যুদ্ধ বিমান দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিরক্ষা সরঞ্জামও দেবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম। অর্থাৎ আমেরিকার দেওয়া এফ-৩৫ যুদ্ধ বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হতে চলেছে। নয়া দিল্লির হাতে এফ-৩৫ এর মত অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম। এছাড়া এই বৈঠকে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পাশে বসিয়ে ঘোষণা করেছেন যে - "আমেরিকা, ভারতকে বিভিন্ন সমরাস্ত্র বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি করবে।"

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বেড়ে হতে চলেছে ৫০০ বিলিয়ন

এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছাড়াও অন্যান্য বিষয়েও কথা হয় দুই রাষ্ট্র নেতার মধ্যে, যার মধ্যে অন্যতম হলো - প্রযুক্তি এবং বাণিজ্য। এই দুই দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়াতে চলেছে, যার পরিমাণ বেড়ে হতে চলেছে ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ যা ভারতীয় মুদ্রায় ৪১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। এই বৈঠকের শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন - "আমেরিকা, ভারতের সঙ্গে 'অপূর্ব' বাণিজ্য চুক্তি করতে চলেছে, যা ইতিহাসের অন্যতম সেরা বাণিজ্য চুক্তি।"

বেআইনি অনুপ্রবেশ সম্পর্কে ট্রাম্পের মন্তব্য

বেআইনিভাবে যে সমস্ত নাগরিক মার্কিন মুলুকে অনুপ্রবেশ করেছে সেই প্রত্যেক বেআইনি অনুপ্রবেশকারী নাগরিককে ফিরিয়ে দেবে ভারতে এবং ভারত তা ফিরিয়ে নেবে। এছাড়া দুই রাষ্ট্রনায়ক মানব পাচার এর বিরুদ্ধে ভারত এবং আমেরিকা এক হয়ে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন। তাছাড়া ভারত ও চীন সীমান্তে বিভিন্ন সমস্যা মেটাতেও আগ্রহী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারত ও চীন সীমান্তে বিভিন্ন সমস্যা মেটাতে ভারতকে সব রকমের সাহায্য করতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মুম্বাই হামলার মূল অভিযুক্তকে ভারতের হাতে প্রত্যর্পণ

বৈঠকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল - অপরাধী প্রত্যর্পণ। ২৬/১১ এর মুম্বাই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত তাহাউর হুসেন রানা-কে আমেরিকা ভারতের হাতে তুলে দেবে বলে কথা হয়েছে দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, এই তাহাউর হুসেন রানা ২০০৮ সালে গণহত্যা চালিয়েছিল ভারতে। মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকে ট্রাম্প, তাহাউর হুসেন রানাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান। ট্রাম বলেছেন - "তাহাউর হুসেন রানা বিশ্বের অন্যতম শত্রু। তাঁকে বিচারের সম্মুখীন হওয়ার জন্য ভারতে পাঠানো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।" এই তাহাউর হুসেন রানা হলেন পাক বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক। ইনি বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি জেলে বন্দি।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে উঠে আসে পাকিস্তান প্রসঙ্গ

এছাড়া দুই রাষ্ট্রনায়ক সন্ত্রাসবাদ দমন নিয়ে যৌথ বিবৃতি দেন, যেখানে পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে। এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য চেষ্টা করতে হবে। তাঁদের দেশের মাটি যাতে সন্ত্রাসবাদীরা ব্যবহার করতে না পারে বা সন্ত্রাসবাদীরা পাকিস্তানের মাটি কে ব্যবহার করে যাতে হামলা চালাতে না পারে সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে হবে পাকিস্তানকেই। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, সন্ত্রাসবাদে এবং সন্ত্রাসী হামলায় মদত দেওয়ার জন্য একাধিকবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে ভারত, যার প্রভাব পড়েছে দুই রাষ্ট্রনায়কের বৈঠকে।

প্রতিরক্ষা শক্তিকে মজবুত করতে চান দুই রাষ্ট্রনেতা

দুই দেশের দুই রাষ্ট্র নেতা দুই দেশের প্রতিরক্ষা শক্তিকে আরও মজবুত করার লক্ষ্যে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন। আর এক্ষেত্রে আমেরিকা, ভারতকে পারমাণবিক প্রযুক্তিতে সব রকমের সাহায্য করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়া পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের ক্ষেত্রেও একজোট হয়ে কাজ করবে দুই দেশ। এবং এভাবেই ১২৩ টি অসামরিক পারমানবিক চুক্তি হবে দুই দেশের মধ্যে