Athletics
বাংলার অ্যাথলেটিক্সে বিস্ময় বালিকা তারকেশ্বরের রামনগরের অ্যাথলিট সুমনা হাঁসদা
তারকেশ্বরের রামনগর নূটবিহারী পাল চৌধুরী উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী সুমনা হাঁসদা বাংলার অ্যাথলেটিক্সে স্বপ্ন দেখাচ্ছে ভারত জয়ের।

বিদ্যুৎ ভৌমিক। ২০ ই জুলাই ২০২৫। এক চিলতে অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরে বাস ।সেই অভাবী ঘরের মেয়ে সুমনা হাঁসদা বাংলার অ্যাথলেটিক্সে স্বপ্ন দেখাচ্ছে ভারত জয়ের ।এমনই দুর্ভাগ্য যে, আবাস যোজনা প্রকল্পে কয়েকবার ইন্সপেকসন করেও তাদের ঘর মেলেনি আজও ।মোটেই তাদের হতদরিদ্র সংসারে অভাব পিছু ছাড়ছে না ।তবুও গৃহকর্তার মনে এমনই আত্মপ্রত্যয় যে, তাদের মেয়ে তারকেশ্বরের উঠতি অ্যাথলিট সুমনা একদিন সংসারের দুঃখ ঘোচাবে ।সুমনাই এখন পরিবারের আশা ভরসা ।
রামনগর নূটবিহারী পাল চৌধুরী উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী সুমনার বাবা শ্রীকান্ত হাঁসদা ও মা লতিকা হাঁসদা দিনমজুরের কাজ করে অতি কায়ক্লেশে সংসার চালান ।একদিন কাজ না করলে উনুনে হাঁড়ি চড়ে না। অর্থাভাবে মেয়ের জন্য কোন সুষমা খাদ্য কোনদিনই জোটাতে পারেনি ।শুধু ফেন ভাত খেয়ে তার এই দুরন্ত সাহসীপনাকে কেউ থামাতে পারেনি।পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, বিগত ৩ বৎসরের মধ্যে সে নিজের জাত চিনিয়ে নামের প্রতি সুবিচার করে উজ্জ্বল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে ২০২৩ সালে প্রাইমারি স্কুল গেমসে ১০০ মিটার ও ২০০ মিটার দৌড়ে প্রথম স্থান অধিকার করে ক্রীড়ামোদীদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে । এরপর আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি ২০২৪ সালে কলকাতার সল্টলেকে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট স্কুল গেমসে অনূর্ধ্ব ১৪- তে ২০০ মিটার দৌড়ে দ্বিতীয় স্থানে সুমনা ।এছাড়া ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে ৬৮ তম ন্যাশনাল স্কুল গেমসে অনূর্ধ্ব ১৪ -তে সে ৫ম স্হানাধিকারিণী হয়।চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি বারাসতের সুভাষ ময়দানে ইন্টার স্টেট ইনভাইটেশন ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে অনূর্ধ্ব ১৪ বিভাগে ৬০০ মিটার দৌড়ে সুমনা প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণ পদক লাভ করে। ২৩ফেব্রুয়ারি সে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করে ক্লাবের ৬২ তম বার্ষিক অ্যাথলেটিক্স মিটে ৬০০ মিটার দৌড়ে প্রথম স্থান ছিনিয়ে নেয় ।এ বছরের ওপেন বেঙ্গল স্টেট মিটে অংশ গ্রহণ করে ট্রায়াথলনে ২৫১৬ পয়েন্ট অর্জন করে রেকর্ড গড়ে রামনগরের ত্রয়োদশী অ্যাথলিট ।
এত সাফল্যের পরেও স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে কোন প্রশংসা মেলে নি। ৪ কিলোমিটার পথ উজিয়ে সাইকেলে করে রোজ সকালে তারকেশ্বর স্কুল মাঠে কোচ রাজদীপ কারকের প্রশিক্ষণে নিজেকে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয় সুমনা । এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ভবিষ্যতে ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল মিটে অংশ নেওয়া তার আগামী দিনের লক্ষ্য ।স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক সুদীপ পাত্র ও অন্যান্য শিক্ষকেরা সুমনার ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহী ও আশাবাদী ।
তপশিলী উপজাতি সম্প্রদায়ের সাঁওতাল পরিবারের একরত্তি মেয়ে সুমনার কথায় : আমার বাবা ও মা অপরের জমিতে মজুরিগিরি করে আমাকে মানুষ করছেন ।খেলার ব্যাপারে সব দিক দিয়ে তারা সহযোগিতা করে চলেছেন ।তারকেশ্বর কোচিং সেন্টারের পরিশ্রমী কোচ রাজদীপ কারক সর্বতোভাবে সাহায্য করেন ।আগামীতে আরও অনেক দূর যাওয়াই আমার লক্ষ্য ।সেই অভীষ্ট লক্ষ্য কি ভাবে পূরণ হবে কে জানে? আমাদের মতো গরিব পরিবারের পক্ষে তা আদৌ সম্ভব হবে কি ? তবুও সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে রামনগরের সম্ভাবনাময় অ্যাথলিট সুমনা সকলের সহযোগিতা পেয়ে এগোতে উন্মুখ ।
ছবি : সংগৃহীত

Comments