যোগা

অর্থাভাবে মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক যোগায় অংশ নেওয়া অনিশ্চিত পূর্বস্থলীর কিশোরী পিয়ালির

পিয়ালি দাস আগামী ৩ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক যোগা প্রতিযোগিতায় ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার দুর্লভ সুযোগ পেয়েছে।কিন্তু বিধি বাম! কারণ বিদেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক স্তরের এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য যাতায়াত , রেজিস্ট্রেশন ও অন্যান্য খরচ বহন করা পিয়ালির অভাবী পরিবারের পক্ষে শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে

বিদ্যুৎ ভৌমিক। ১৮ ই জুলাই ২০২৫ । গরিব ঘরে জন্ম নেওয়া যে কি জ্বালা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলীর ২ নং ব্লকের অধীন সরডাঙা গ্রামের  যোগাকন্যা ধিৎপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীতে পাঠরতা পিয়ালি দাস ।সংসারে আর্থিক অনটন গোটা দাস  পরিবারকে অক্টোপাসের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে ।দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারে অভাব প্রতিনিয়ত দরজায় কড়া নাড়ে ।এই চরম পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে বাড়ির বড় মেয়ে পিয়ালি আগামী ৩ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক যোগা প্রতিযোগিতায় ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার দুর্লভ সুযোগ পেয়েছে।কিন্তু বিধি বাম! কারণ বিদেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক স্তরের এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য যাতায়াত , রেজিস্ট্রেশন ও অন্যান্য খরচ বহন করা পিয়ালির অভাবী পরিবারের পক্ষে শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, বিগত দিনে পূর্বস্থলীর কিশোরী জেলা ও রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে অজস্র পুরস্কার তার ঝুলিতে জমা পড়েছে।কিন্তু এই মুহূর্তে পিয়ালির স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করতে তার বাবা সুমন্ত দাস মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বিভিন্ন জায়গায় অর্থ সংগ্রহে ছুটে বেড়াচ্ছেন।

সূত্রের খবর, পিয়ালির বাবা সুমন্ত দাস দিনমজুরের কাজ করে অতি কায়ক্লেশে সংসার চালান ।একদিন কাজ না করলে উনুনে হাঁড়ি চড়ে না। এই পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা ভেবে আকুল যে, কিভাবে বাড়ির মেয়ের স্বপ্নপূরণকে বাস্তবায়িত করা যায় ।তাছাড়া সংসারের হাল এমনই পর্যায়ে পৌঁছেচে যে, যে দিন কাজ থাকে না, সেদিন পিয়ালির বাবাকে ঘটি গরম বিক্রি করে সারাদিন ধরে ঘুরে বড্ড জোর দেড়শ থেকে দুশো টাকা রোজগার হয় ।পিয়ালির মা বিউটি দাসও মাঠে অপরের জমিতে মজুরিগিরি করেন।আবার কখনও বর্ষার দিনে কাজ না থাকলে রোজগারও বন্ধ হয়ে যায় ।আরও জানা যায় যে, ৫ বৎসর বয়স থেকেই পিয়ালি পারুলিয়ায় পিয়ালি সেনের প্রশিক্ষণে ট্রাডিশনাল যোগা প্রশিক্ষণ চালিয়ে আসছে ।গত ২০২৪ সালে ভাইজ্যাকে অনুষ্ঠিত ট্রাডিশনাল যোগা ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় অনূর্ধ্ব ৭ বিভাগের ইভেন্টে পিয়ালি প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণ পদক লাভের অধিকারিণী হয়।চলতি বছরের ৭ জুন তারিখে দার্জিলিংয়ে আয়োজিত ন্যাশনাল ট্রাডিশনাল যোগা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সে শীর্ষস্হান দখল করে নেয় ।তাছাড়া কলকাতা ও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যোগা প্রতিযোগিতায় অভাবনীয় সাফল্য তার নামের প্রতি সুবিচার করে উজ্জ্বল প্রতিভার  স্বাক্ষর রেখেছে।

পিয়ালির বাবা সুমন্ত দাস জানান যে, মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ইন্টারন্যাশনাল যোগা প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার জন্য প্রায় এক লক্ষ টাকার দরকার যা তাঁর অভাবী পরিবারের পক্ষে ঐ টাকা জোগাড় করা অসম্ভব ।এমতাবস্থায় তিনি বিভিন্ন স্বেচ্ছাচারী সংগঠকদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন যার দৌলতে তাঁর মেয়ের স্বপ্নপূরণ সার্থক হয় ।তা না হলে পিয়ালির আশা নিরাশায় পর্যবসিত হবে ।তিনি আরও জানান যে, রাজ্যের জনদরদী সরকার যদি এ ব্যাপারে  আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা করেন , তাহলে মেয়ে রাজ্য তথা দেশের সুনাম বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাবে।পিয়ালির প্রশিক্ষক পিয়ালি সেনের  বক্তব্য : ওর মধ্যে অনেক প্রতিভা লুকিয়ে আছে ।কোন সহৃদয় ব্যক্তি যদি ওর পাশে আর্থিক সাহায্য নিয়ে দাঁড়ায়, তাহলে ও একদিন এলাকার ও দেশের সুনাম উজ্জ্বল করবেই ।কিন্তু এখন পূর্বস্থলীর যোগাকন্যা পিয়ালির মালয়েশিয়ায়  অনুষ্ঠিতব্য ইন্টারন্যাশনাল যোগা কম্পিটিশনে অংশ নেওয়া প্রশ্নচিহ্নের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে যা তার ক্রীড়া জীবনে অশনি সংকেত বলা যায় ।
ছবি  : সংগৃহীত ।

Advertisement