Athletics

স্বপ্ন থেকে এশিয়ান গেমসে লড়াইয়ের লক্ষ্যে কালিয়াচকের ট্রাক চালকের মেয়ে সাইরিন পারভীন

১২ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত নেপালের পোখরায় ইন্দো- নেপাল ইয়ুথ স্পোর্টস ইনডোর অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে কালিয়াচকের স্কুলছাত্রী সাইরিন পারভীন ১০০ মিটার ও ২০০ মিটার ইভেন্টে দুটোতেই স্বর্ণ পদক জয় করে নজির স্থাপন করেছে

বিদ্যুৎ ভৌমিক। ২২শে জুলাই ২০২৫।  ভগ্নকুঠিরে অগোছালো ঘরে বাস ।তবে এটাকে বাসযোগ্য বলে মনে হয় না ।এই ভাঙা ঘরে বাস করে কালিয়াচকের রোগা পাতলা চেহারার মেয়ে একরাশ আকাশ মুঠোয় এনে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে ।গত ১২ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত নেপালের পোখরায় ইন্দো- নেপাল ইয়ুথ স্পোর্টস ইনডোর অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে কালিয়াচকের স্কুলছাত্রী সাইরিন পারভীন ১০০ মিটার ও ২০০ মিটার ইভেন্টে দুটোতেই স্বর্ণ পদক জয় করে নজির স্থাপন করেছে ।গরিব পরিবারেরই যে প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটে, তা কালিয়াচকের মেয়ে সাইরিন পারভীন ওরফে সোনি-ই প্রমাণ করে নিজের জাত চিনিয়েছে ক্রীড়াচাতুর্যের গুণে ।সেই অভাবী পরিবারই এখন সাইরিনের ওপর ভরসা রাখছে।

সূত্র মারফৎ জানা যায় যে, মালদহ জেলার কালিয়াচক-১ নং ব্লকের অধীন কালিকাপুর কবিরাজপাড়ার মেয়ে  সাইরিন কালিয়াচক গার্লস হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরতা ।সাইরিনের বাবা হাফিজুল শেখ পেশায় লরির ড্রাইভার ।মা এলিনুর বিবি আদতে গৃহবধূ হলেও মেয়ের  খেলার ব্যাপারে সদাসর্বদা উৎসাহিত করেন।সাইরিনের একমাত্র ভাই স্কুল পড়ুয়া ।অভাবী সংসারে শত দুঃখ যন্ত্রণার মধ্যেও সাইরিন ২০ কিলোমিটার পথ উজিয়ে রোজ সকালে কালিয়াচক থেকে ইংরেজবাজার এয়ারপোর্ট কিংবা জেলা ক্রীড়া সংস্থার ময়দানে গভীর অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়।কালিয়াচক থেকে ইংরেজবাজার আসতে ও  যেতে গাড়ি ভাড়া বাবদ ৪০ টাকা খরচ হয় ।তাতেও সাইরিনের খেলায় অগ্রগতি থমকে যায় নি।গত ১৭ জুলাই তার সাফল্যকে স্বীকৃতি জানাতে  মালদহ জেলা প্রশাসন বিবেকানন্দ যুব আবাস কেন্দ্রে সাইরিনকে সম্বর্ধনা জানায়।নেপালে জোড়া স্বর্ণ পদক জয়ের আগেও রাজ্য ও জাতীয় স্তরের অ্যাথলেটিক্সে সাইরিন তার নামের প্রতি সুবিচার করে উজ্জ্বল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে।পড়াশুনা ও খেলাধুলোর পরেও সে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলতে টেলারিংয়ের কাজে নিজের পারদর্শিকতা জাহির করেছে ।সেই কাজের রোজগার থেকে  সে নেপালে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় খরচপাতি জুগিয়েছে ।আরও জানা যায় যে,  ১০ বৎসর বয়স থেকেই সাইরিন  অ্যাথলেটিক্স জগতে পা রাখে। এবারে নেপালে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় দুটি ইভেন্টেই স্বর্ণ পদক জয় করে সাইরিন খুবই খুশি ।এই কম্পিটিশনে উত্তর পূর্ব ভারতের ১৪ টি রাজ্যের নামকরা প্রতিযোগীদের সাথে সাইরিন জবরদস্ত লড়াইয়ে সম্মুখীন হয়ে  অপরাজেয় আখ্যা লাভ করেছে।বাংলার ১২ জনের দলে সাইরিন মালদহের একমাত্র  প্রতিনিধিত্বকারী ।

সাইরিন পারভীন জানায় যে, বাবা লরি চালিয়ে আমাকে ও ভাইকে মানুষ করছেন ।বাড়িতে মা আছেন ।আমার খেলার ব্যাপারে বাবা ও মা সব দিক দিয়ে সহযোগিতা করে চলেছেন ।ইংরেজবাজারে আমার কোচ অসিত পাল সর্বতোভাবে সাহায্য ও প্রেরণা জোগাচ্ছেন ।যদিও নেপালের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কথা আমার প্রশিক্ষককে জানাই নি।ভেবেছিলাম, আদৌ সাফল্য আসবে কিনা ।আগামীতে এশিয়ান গেমসে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। সে আরও জানায় যে, আগামীতে আরও অনেক দূর যাওয়াই আমার লক্ষ্য ।কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবো কী করে? এর জন্য তাকে অনেক দুর্গম পথ পেরোতে হবে ।সাইরিন খেলার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায়।আর এশিয়ান গেমসে সুযোগের অপেক্ষায় সে দিন গুনছে।তার বক্তব্য : এজন্য বড় জায়গায় আধুনিক পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ নিতে হবে ।তার জন্য খরচ অনেক ।আমাদের মতো গরীব পরিবারের পক্ষে আদৌ তা  সম্ভব হবে  কি ? এমনই প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে সাইরিনের ।সেই অভীষ্ট লক্ষ্যকে স্থীর রেখে এলাকার শুভানুধ্যায়ী মানুষের সহযোগিতার ওপর অগাধ ভরসা রাখছে কালিয়াচকের সোনার মেয়ে সাইরিন ।
ছবি  : সংগৃহীত ।

Advertisement