শ্যামল জানা
বটবাবা শ্যামল জানার সংকল্প বিশ্বজুড়ে ৫০০০ বটবৃক্ষ রোপণ, ইতিমধ্যে প্রকৃতির সেবায় ১৫৭৬ টি বটবৃক্ষ রোপণ
সমগ্র বিশ্ব কে বিশ্ব-উষ্ণায়ন এর হাত থেকে রক্ষা করতে গাছ পাগল পেশায় শিক্ষক শ্যামল জানা বিশ্ব জুড়ে মানব কল্যানে ৫০০০ বটবৃক্ষ রোপণের সংকল্প
সঞ্জয় দোলুই । ২৫শে জুলাই ২০২৫। বছরের পর বছর প্রকৃতি কে ধ্বংস করে চলেছে মানুষ। তারই কর্মফলে বিশ্ব-উষ্ণায়ন বেড়েই চলেছে। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা বেড়েই চলেছ। শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয় ভারতবর্ষ তথা সমগ্র বিশ্বে উষ্ণায়ন অব্যাহত। সমগ্র বিশ্ব কে বিশ্ব-উষ্ণায়ন এর হাত থেকে রক্ষা করতে গাছ পাগল পেশায় শিক্ষক শ্যামল জানা বিশ্ব জুড়ে মানব কল্যানে ৫০০০ বটবৃক্ষ রোপণের সংকল্প নিয়েছেন।
পেশায় শিক্ষক আর নেশা বৃক্ষরোপণ। সারা পৃথিবী কে নিজের বাগান মনে করে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর এর শ্যামল জানা বৃক্ষরোপণ করে চলেছেন মনের আনন্দে। "বিশ্ব-উষ্ণায়নের হাত থেকে প্রকৃতি কে রক্ষা করতে এবং প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে শয়নে স্বপনে, জাগরণে, ভ্রমণে হোক বৃক্ষরোপণ" এই বার্তা সমাজের প্রতি, বটবাবা শ্যামল জানার। ভারতবর্ষের ২৮ টি রাজ্যের মধ্যে ১৬ রাজ্যে এবং ২ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বটবৃক্ষ রোপণ করেছেন গাছপাগল শ্যামল জানা। এমনকি ভারতবর্ষের বাইরে বিদেশে ও বটবৃক্ষ রোপণ করেছেন। নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশ ও বটবৃক্ষ রোপণ করেছেন শ্যামল জানা। তিনি বিশ্ববাসী কে "থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে বৃক্ষরোপন বিশ্বজুড়ে' বার্তা দেন। পশ্চিমবঙ্গের ২৩ টি জেলাতেই বটবৃক্ষ রোপণ করেছেন। সুন্দরবন এর সামুদ্রিক এলাকায় থেকে কলকাতা মহানগরীর ধর্মতলায়, বিগ্রেড, বিকাশ ভবনে শুরু করে প্রতিটি জেলায় বটবৃক্ষ রোপণ যাত্রা অব্যাহত। এখন পর্যন্ত বটবাবা শ্যামল জানা ১ হাজার ৫৭৬ টি বটবৃক্ষ রোপণ করেছেন। লক্ষ্য সারা পৃথিবী জুড়ে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০০০ হাজার বটবৃক্ষ রোপণ। স্বপ্ন ৫ লক্ষ বটবৃক্ষ রোপণ করার, সেই লক্ষ্য এগিয়ে চলেছেন গাছপাগল শ্যামল জানা। তিনি শিক্ষকতা মাহিনার বেশিরভাগ টাকাই ব্যয় করেন বটবৃক্ষ রোপণে, ভিক্ষা করে হলেও ৫ হাজার বটবৃক্ষ রোপণ তিনি করবেন দৃঢ় সংকল্প। প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসার টানে নিজের রোজকারের টাকা দিয়ে প্রকৃতি মায়ের সেবা করেন। শুধু বটবৃক্ষ রোপণ নয় মানুষের সেবায় নিবেদিত প্রাণ শ্যামল জানা।
পূর্ব মেদিনীপুর এর কাঁথি-১নং ব্লকের ছত্রধরা গ্রামনিবাসী শ্যামল জানা পেশায় স্কুল শিক্ষক, নেশায় গাছ পাগল। ধর্ম তার মানব কল্যান কর্ম তার প্রকৃতি মায়ের সেবা এবং মানবসেবা।প্রকৃতিপ্রেমী শ্যামল জানার লক্ষ্য বিশ্ব জুড়ে মানব কল্যাণে ৫০০০ বটবৃক্ষ রোপণ। উপার্জনের অর্ধেক টাকায় তিনি ব্যয় করেন মানবসেবায় এবং প্রকৃতি মায়ের সেবায়। স্কুলের ছুটির ফাঁকে বেড়িয়ে পড়েন বটবৃক্ষ রোপণ করার উদ্দেশ্য।সাথে থাকে মাটি খোঁড়ার জন্য একটি ধাতব গাঁইতি এবং নিজের তৈরি করা একটি গ্রীন ট্রলি, যার মধ্যে থাকে বটগাছের চারা। শ্যামল বাবুর কথায় "ভিক্ষা করতে হয় করব কিন্তু বৃক্ষরোপণ করবই"। কখনও স্ত্রী মনিকা এবং মেয়ে শ্রীনিকা কে নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন বটবৃক্ষ রোপণ করতে। স্বামী এই কাজে গর্বিত মনিকাদেবী । শুধু বটবৃক্ষ রোপণ করা নয় তাকে রক্ষনাবেক্ষন ও করেন।
প্রকৃতি প্রেমী শ্যামল জানার কাছে গোটা পৃথিবীই তার কাছে বাগান। শ্যামল বাবুর বাণী "মরার আগে দাগ নয় কিছু গাছ রেখে যা" সেই উদ্দেশ্য ৫০০০ বটবৃক্ষ রোপণের লক্ষ্য। তিনি আরও বলেন শয়নে স্বপনে জাগরণে হোক বৃক্ষ রোপণ। শ্যামল জানা শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয় সারা ভারতবর্ষে এমনকি বিশ্ব জুড়ে বটবৃক্ষ বসাতে চান। তিনি বলেন, "সারা পৃথিবী আমার নিজের বাগান"। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ২৩ টি জেলা সহ ভারতের ১৬ টি রাজ্যে এবং বিদেশে নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশে বটবৃক্ষ রোপণ করেছেন। শ্যামল বাবুর শ্লোগান "থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে বৃক্ষরোপণ বিশ্বজুড়ে" তিনি আরও বলেন, "প্রতিটি দিন হোক অরণ্য দিবস''।
"একটি গাছ একটি প্রাণ শুধু স্লোগানে নয় বাস্তবায়ন করতে হবে"। সমস্ত স্তরের মানুষ কে এগিয়ে আসতে হবে বৃক্ষরোপণে, প্রকৃতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে। শ্যামল বাবু বলেন, "একটি একটি বট গাছ আমার কাছে একটি একটি ফ্ল্যাট,যেখানে হাজার হাজার পাখি,পশু,কাঠবেড়ালী খেলবে,গান গেয়ে বেড়াবে"।
৫০০০ বটবৃক্ষ রোপণ করা উদ্দেশ্য প্রকৃতি প্রেমী শ্যামল জানা সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস রোধে দিঘা, শঙ্করপুর মান্দারমণি তে ১০০ বেশি বটবৃক্ষ রোপণ করেছেন। কলকাতার ইডেন গাডেন্সে, বিগ্রেড ময়দানে, বিকাশ ভবনে, এমনকি কলকাতার পার্কগুলো তে যেখানে জায়গায় ফাঁকা পান বটবৃক্ষ রোপণ করেন। সাহিত্যিক শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের বাড়ি দেউলটিতে বটবৃক্ষ রোপণ। বাংলার গান্ধীবুড়ি শহীদ মাতঙ্গিনী হাজরা মহাশয়ার জন্মমাটি তমলুকের হোগলা গ্রামেও তিনি বটবৃক্ষ রোপণ করেছেন । ভারতবর্ষের প্রথম পোষ্ট অফিস খেজুরী প্রথম ডাক বাংলোতে বটবৃক্ষ রোপণ। দীঘায় নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির প্রাচীরের পাশেই একটি ও মেরিন ড্রাইভে 2টি বটবৃক্ষ রোপণ করেছেন। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের ২৩ জেলায় তেই গাছ পাগল শ্যামল বাবু বটবৃক্ষ রোপণ করেছেন। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে উড়িষ্যা, মেঘালয়, দিল্লিতে, আসামে বটবৃক্ষ রোপণ করেছেন। আসামের হাইকোর্টে তিনি বটবৃক্ষ রোপণ করেছেন। বিদেশি মাটিতে ও বটবৃক্ষ রোপণ করেছেন নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশে। লক্ষ্য সমগ্র বিশ্ব জুড়ে বটবৃক্ষ রোপণ। জীবনের অন্যতম বড় লক্ষ্য ৫০০০ বটবৃক্ষ রোপণ করা। আর সেই স্বপ্ন পূরন হয়ে গেলে ৫ লক্ষ বটবৃক্ষ রোপণ করা সেই লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্য ১৫৭৬ টি বটবৃক্ষ ইতিমধ্যে রোপণ করেছেন।
বটবৃক্ষ রোপণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সেবায় নিবেদিত প্রাণ শ্যামল জানা। নিজের উপার্জনের অর্থে বহু মানুষের সেবা করেন তিনি। কখনও অন্ন বস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে থাকেন। ফি বুক স্টল থেকে গরীব ছাত্র ছাত্রী দের বই দিয়ে সাহায্য করে থাকেন। শ্যামল জানার ভালোবাসার স্পর্শে ভবঘুরেরাও ধন্য হয়।
শ্যামল জানার বাপের হোটেল নামে একটা ঘর রয়েছে সেখানে পশু পাখিদের জন্য খাবার রাখা থাকে। পশু পাখিরা মহাআনন্দে সেগুলো কে খায়। শ্যামল বাবু তা দেখা পরম আনন্দ পান। শ্যামল জান এক শিক্ষা সমাজের কাছে। মানবসেবায়, পশুপাখি সেবায় এবং প্রকৃতির সেবায় নিবেদিত প্রাণ।

Comments