Karate
চাষীর ঘরে জন্ম নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারাটেতে জোড়া পদক জয় বারাসতের স্কুল পড়ুয়া মহম্মদ সওবান হোসেনের
উত্তর ২৪ পরগণার বারাসতের পলতাডাঙার ষোড়শ বর্ষীয় তরুণ মাইকেলনগর শিক্ষানিকেতনের একাদশ শ্রেণীতে পাঠরতা মহম্মদ সওবান হোসেন।সূত্র মারফৎ জানা যায় যে, সম্প্রতি নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত ১৬তম এন এস কে এ ওপেন আন্তর্জাতিক ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় সওবান রৌপ্য পদক অধিকার করে দেশের মুকুটে নয়া পালক সংযোজিত করলেন

বিদ্যুৎ ভৌমিক : কথায় আছে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় ।সেই সদিচ্ছার সঙ্গে পরিশ্রমের মিশেলে অভাবনীয় সাফল্য তুলে আনা যায় ।তা আবার প্রমাণ করে দেখিয়ে দিলেন উত্তর ২৪ পরগণার বারাসতের পলতাডাঙার ষোড়শ বর্ষীয় তরুণ মাইকেলনগর শিক্ষানিকেতনের একাদশ শ্রেণীতে পাঠরতা মহম্মদ সওবান হোসেন।সূত্র মারফৎ জানা যায় যে, সম্প্রতি নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত ১৬তম এন এস কে এ ওপেন আন্তর্জাতিক ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় সওবান রৌপ্য পদক অধিকার করে দেশের মুকুটে নয়া পালক সংযোজিত করলেন ।এই প্রতিযোগিতায় ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, নেপাল ও জাপানের বাঘা বাঘা প্রতিযোগীরা অংশ গ্রহণ করেছিলেন । আরও জানা যায় যে, প্রতিযোগিতার তৃতীয় রাউন্ডে সওবান নেপাল ও বাংলাদেশের প্রতিযোগীদের পর্যুদস্ত করে চূড়ান্ত পর্যায়ে অংশ নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ লাভ করেন ।কিন্তু দুঃখের বিষয়, ফাইনালে জাপানের প্রতিযোগীর কাছে বশ্যতা স্বীকার করে রৌপ্য পদক নিয়েই তাঁকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ।চূড়ান্ত পর্যায়ে সওবান বীরের মতো অসম লড়াইয়ের কথায় প্রশংসায় পঞ্চমুখ আপামর ক্রীড়ামহল।এছাড়া কাতারেও আন্তর্জাতিক ক্যারাটেতে সওবান ব্রোঞ্জ পদক জয় করার কৃতিত্ব তাঁকে চিনতে প্রশস্ত করেছে।এখানে বলে রাখা ভালো যে, ইতিপূর্বে বারাসতের পলতাডাঙার তরুণ দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় মূলতঃ ন্যাশনাল ও ইন্টার ন্যাশনাল কম্পিটিশনের দৌড়ে পদক লাভ করলেও বিদেশের মাটিতে জোড়া পদক অর্জন করা এবারেই প্রথম।ভাবা যায়, মাত্র ১৬ বৎসরের স্কুল পড়ুয়ার এমনতর প্রতিভার স্বাক্ষরকে কুর্নিশ না জানিয়ে উপায় নেই ।
ক্যারাটেতে ব্ল্যাক বেল্ট
সূত্রের খবর, ক্যারাটেতে ব্ল্যাক বেল্ট সওবানের ছোট বয়স থেকেই ক্যারাটের প্রতি অসীম আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়।তাঁর পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো না হলেও পড়াশুনায় সওবান খুবই মেধাবী ।পড়াশুনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তিনি ক্যারাটেতে গভীর মনোযোগ সহকারে চালিয়ে যেতে আগ্রহী ।তাঁর বাবা চাষাবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও ছেলের ক্যারাটে খেলাকে খুবই তারিফ করতেন ।তাঁর ক্যারাটেতে অংশগ্রহণ সম্ভবত ২০১৯ সাল থেকে ।পরিবারের সদস্যরা তাঁকে এ ব্যাপারে সর্বতোভাবে প্রেরণা জুগিয়ে চলেন।তার চেয়ে তাঁর বাবার অবদান নিঃসন্দেহে অতুলনীয় ।সওবান জানান যে, বাবাই আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন ।তিনিই সবচেয়ে বেশি মোটিভেট করেন আমায়।
ক্যারেটের পাশাপাশি পড়াশোনায় অসামান্য প্রতিভা
তবে এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, সওবান ছোট বয়স থেকেই খেলাধুলোর প্রতি একাত্মবোধে জড়িয়ে পড়েন ।কারণ মাদ্রাসাতে পড়াকালীন খেলাধুলোয় অংশ গ্রহণে তাঁর সাফল্য চোখে পড়ার মতো ।প্রথম স্থান অর্জন করা ছাড়া তিনি দ্বিতীয় হতেন না ।এর ফলে তিনি খেলাধুলার জগতে অসামান্য অবদান রেখে স্থানীয় মহলে নিজের জাত চিনিয়েছেন।ক্যারাটেতে সাফল্য অর্জনের ফলে তাঁর শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি ঘটেছে , এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না ।তবে অন্যান্য খেলা যেমন ক্রিকেট ও ফুটবলের চেয়ে ক্যারাটেকেই সওবান সাপোর্ট করেছেন ।তবে অ্যাথলেটিক্সের প্রতি তাঁর মনোনিবেশ অপরিসীম ।তাঁর আগামী দিনে লক্ষ্য, একটি ক্যারাটে অ্যাকাডেমি গড়ে তোলা ।সেই সঙ্গে এও বলা যায় যে, ক্যারাটেতে যোগ দেওয়ায় তাঁর জীবনের লড়াইয়ের মানসিকতা প্রবল থেকে প্রবলতর হয়েছে ও নিজেকে আত্মরক্ষা করতে শিখিয়েছে ।সে কারণে তিনি জানান যে, ভবিষ্যতে আমি এন ডি এ ( ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে ) -তে যোগ দিতে চাই ।তার আগে সওবান আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ক্যারাটেতে আরও কিছু দৃষ্টান্তমূলক জয়জয়কার সাফল্য তুলে আনতে আগ্রহী ।
ছবি : সংগৃহীত ।

Comments