West Bengal

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে দীর্ঘ ১৪ বছর পর মিললো আর্থিক ক্ষতিপূরণ

আইনি জটিলতায় আটকে ছিল আর্থিক ক্ষতিপূরণ। তবে ১৪ বছর পর মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মিললো পাঁচ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতিপূরণ।

সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষদের জীবন খুবই কষ্টকর। তাঁদের উভয় সংকট - জলে কুমির আর ডাঙায় বাঘ। তাই নিয়েই ঘর করতে হয় সুন্দরবন এলাকার মানুষজনকে। মাঝেমধ্যে বাঘে টেনে নিয়ে যায় সাধারণ মানুষকে, ফলে বেঘোরে প্রাণহারান তাঁরা। সুন্দরবন এলাকার মানুষদের বাঘের হানায় মৃত্যু নতুন নয়, তবে যে সমস্ত পরিবার গুলির একজন মাত্র উপার্জনশীল মানুষ, তাঁরা যদি প্রাণ হারান তাহলে অচিরেই ভেসে যায় তাঁদের অসহায় পরিবারগুলি।

দীর্ঘ ১৪ বছর পর মিললো আর্থিক ক্ষতিপূরণ

জলে কুমির আর ডাঙায় বাঘ - এই উভয় সংকটের জন্য সুন্দরবন এলাকার মানুষদের জীবন খুবই কষ্টের। মাঝেমধ্যেই সাধারণ মানুষকে বাঘ টেনে নিয়ে যায়, মর্মান্তিক মৃত্যু হয় তাঁদের। তবে যে সমস্ত পরিবার গুলির একজন মাত্র উপার্জনশীল মানুষ তাঁদের যদি বাঘের হানায় মৃত্যু হয়, তাহলে তাঁদের পরিবার গুলি কার্যত ভেসে যায়। সেই পরিবারটি অকালে শেষ হয়ে যায়। আর এমনি-ই তিনটি পরিবারকে তাঁদের একমাত্র উপার্জনশীল মানুষের বাঘের হানার মৃত্যুর দীর্ঘ ১৪ বছর, ১১ বছর ও ৬ বছর পর ক্ষতিপূরণ পেতে সাহায্য করল কলকাতা হাইকোর্ট।

৩ টি অসহায় পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের নির্দেশ

সুন্দরবন এলাকার তিনটি পরিবারের একজন করে উপার্জনশীল মানুষ ছিলেন, সেই একজন করে উপার্জনশীল মানুষের মৃত্যু হয়েছিল অতর্কিতে বাঘের হানায়। ঘটনাগুলি ঘটেছিল যথাক্রমে চোদ্দো বছর, এগারো বছর এবং ছয় বছর আগে। বাঘের হানায় প্রাণ হারিয়েছিলেন পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম এবং উপার্জনশীল মানুষ, ফলে তাঁদের অসহায় পরিবার ভেসে গিয়েছিল। সেই তিনটি পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিল মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট।

বিচারপতি সিনহার নির্দেশে ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ 

বাঘের হানায় প্রাণ হারিয়েছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ও কর্মক্ষম মানুষ। বাঘের হানায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছিলেন তাঁদের অসহায় পরিবার ভেসে গিয়েছিল। আর সেই পরিবারগুলিকেই মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন।

'বাঘের হানার মৃত্যু' - এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মামলাটি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারাধীন ছিল। এই মামলাটির বিচারের দায়িত্বে ছিলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। বিচারপতির সিনহা, নিহত তিনটি পরিবারের মানুষদের কথা শোনেন এবং অন্যান্য পক্ষের সাক্ষীদের কথা শোনার পর তিনি (বিচারপতির সিনহা), তিনটি পরিবারের হাতে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনটি পরিবার পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাবে অর্থাৎ মোট ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ১৫ লক্ষ টাকা।

দীর্ঘ অপেক্ষার পর আইনি লড়াইয়ে জয় পেলেন ভুক্তভোগী পরিবার গুলি 

এই মামলাটির বিষয়ে বিচারপতি অমৃত সিনহা নির্দেশ দেন - 'পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ - রায় ঘোষণাার পরের দিন থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে, তিনটি ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দিতে হবে।' এই ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে ভুক্তভোগী তিনটি পরিবারকে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে এবং লড়তে হয়েছে আইনি লড়াই। অবশেষে সেই আইনি লড়াইয়ে তাঁরা জয় পেলেন। পাঁচ লক্ষ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেলেন ভুক্তভোগী পরিবার গুলি।

বাঘের হানায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছিলেন তাঁদের পরিচয় 

বাঘের হানায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছিলেন তাঁরা হলেন - নিরাপদ মন্ডল, যাঁর বাড়ি সুন্দরবন এলাকার গোসাবায়নিরাপদ মন্ডল প্রায় ১৪ বছর আগে বাঘের হানায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। এছাড়া সুন্দরবনের কোস্টাল থানার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মন্ডল, তিনিও ১১ বছর আগে বাঘের হানায় প্রাণ হারিয়েছিলেন আর ৬ বছর আগে অর্জুন মন্ডল, তিনিও বাঘের হানায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। আর এত বছর পর এই তিনটি মানুষের ভুক্তভোগী পরিবার গুলি মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবেন।

নিয়মের বেড়াজালে বঞ্চিত হতে হতো ভুক্তভোগী পরিবার গুলিকে 

বাঘে হানায় মৃত্যু হলেই পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার একটি নিয়ম আছে। কিন্তু সেই নিয়ম বিভিন্ন জটিলতার মধ্যে আবদ্ধ ছিল এতদিন। এছাড়া ভুক্তভোগী পরিবারগুলি অভিযোগ করেছেন - বিভিন্ন নিয়মের ও জটিলতার দোহাই দিয়ে বনদপ্তর সেই ক্ষতিপূরণ গুলি ভুক্তভোগী পরিবার গুলির হাতে তুলে দিত না। কিন্তু ২০২৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট এই বিষয়ে অনেক জটিলতার স্বরলিকরন করে দেন। আদালত নির্দেশ দেন কারোর মৃত্যু যদি বাঘের হানায় হয়, এবং সেটা যদি প্রমাণিত হয় তাহলে নিহত পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

Advertisement