Akshay Bhagat

ইচ্ছাপূরণে সাইকেলে রাশিয়া পাড়ি পুরুলিয়ার অযোধ্যার অক্ষয় ভগতের

পুরুলিয়া জেলার অযোধ্যা পাহাড়ের বুরদা গ্রামের দূর অভিযানে উৎসুক অক্ষয় ২০২৪ সালে নভেম্বর মাসের ২২ তারিখে পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি থেকে সাইকেল চালিয়ে তার যাত্রাপথের শুভ সূচনা করে তারপর সাইকেল যোগে পুরুলিয়া থেকে রাশিয়া যাত্রা।

 বিদ্যুৎ ভৌমিক । ৬ই জুলাই ২০২৫ । কথায় বলে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় । সেই ইচ্ছার দৌলতে অভিনব প্রয়াসে অপূর্ণ স্বপ্নও সার্থকতা লাভ করে ।সাইকেল যোগে পুরুলিয়া থেকে রাশিয়া যাত্রা, ভাবলে অবাক হতে হয় ।এই অবাক করা দুঃসাহসিক কর্মকান্ডের নায়ক পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার ২৭ বৎসর বয়সী অক্ষয় ভগত ।পুরুলিয়া জেলার অযোধ্যা পাহাড়ের বুরদা গ্রামের দূর অভিযানে উৎসুক অক্ষয় ২০২৪ সালে নভেম্বর মাসের ২২ তারিখে পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি থেকে সাইকেল চালিয়ে তার যাত্রাপথের শুভ সূচনা করে কলকাতা পৌঁছান।সেখান থেকে বিমান যোগে থাইল্যান্ডে রওনা দেন ।ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভিসা বিনা কষ্টে পাওয়ার কারণে তার সেই দেশে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াতে কোন অসুবিধা হয় নি।এরপর তিনি সাইকেল যোগে চীন, মঙ্গোলিয়া, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামের মতো বিভিন্ন দেশ যাত্রা করে রাশিয়ায় পৌঁছান। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে যে, এই সব দেশ তো বিমানেও যাওয়া যায়, তাহলে সাইকেলে কেন ঘুরে বেড়ালেন অক্ষয়? এর উত্তরে অক্ষয় জানান যে, ছেলেবেলায় স্বপ্ন দেখতাম পৃথিবী ঘুরে দেখব।কিন্তু সেই সামর্থ্য ছিল না 
তাই ঠিক করলাম, ইচ্ছে আছে যখন, তখন সাইকেল নিয়েই বেরিয়ে পড়া যাক্।ইচ্ছেপূরণ করার লক্ষ্যে অক্ষয় সাইকেলের সহযাত্রী হলেন।

সূত্রের খবর, অক্ষরের পরিবারের আর্থিক সংগতি আশানুরূপ নয়।ছেলেবেলা থেকেই তিনি নানা ধরনের পেশায় যুক্ত ছিলেন ।কখনও দুধ বিক্রি করেছেন, আবার কখনো খবরের কাগজ ও লটারির টিকিট বিক্রি করে দিনযাপন করেছেন ।তার লেখাপড়া মাধ্যমিক পর্যন্ত , আর এগোতে পারেনি আর্থিক অস্বচ্ছলতায়।তবে তার বইপড়া একটা নেশা বলা যায় ।সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ' চাঁদের পাহাড় ' বইটি পড়ে তার মনে হয়েছিল, তিনি চাঁদের পাহাড় খুঁজতে বেরোবেন ।তারপর থেকেই তার দুঃসাহসে ভরা অভিযান শুরু ।এ ব্যাপারে পুরোপুরি মদত জুগিয়েছেন তার  জন্মদাতা বাবা ও তার  বড় দিদি।

অ্যাডভেঞ্চার প্রসঙ্গে অক্ষয় জানান যে, ২০১৮ সালে পকেটে মাত্র দু' হাজার টাকা নিয়ে প্রথম সাইকেল যোগে ভারত ভ্রমণে বেরোই ।কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী ৪০১দিনে শেষ করি।যখন বাড়ি ফিরে আসি তখনও পকেটে ২ হাজার টাকাই রয়ে গেছে ।তার কারণ ভারতবর্ষে বিনামূল্যে থাকা খাওয়ার কোন অভাব হয় না ।কিন্তু বিদেশে ঘোরা খুব সহজ নয় ।তবে অক্ষরের মনের জোর ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে কুটুমডাক ডাকে।২০২২ সালে তিনি আবার বেরিয়ে পড়েন চাঁদের দেশে পাড়ি দিতে ।কেনিয়া রওনা হওয়ার কালে তিনি  ডাকাতের পাল্লায় পড়েন।তাতেও তিনি দমবার পাত্র নন।সাইকেল চালিয়ে কেনিয়া, তানজানিয়া ও মাসাইমারা ঘোরেন।এমন কি অযোধ্যার রামমন্দির উদ্বোধনের আগে তিনি পায়ে হেঁটে উত্তরপ্রদেশ হয়ে রামেশ্বরম থেকে শ্রীলঙ্কা পাড়ি দেন।এরপর ২০২৪ সালে নভেম্বর মাসে তার রাশিয়া অভিযান ।

আগেই বলেছি, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া যাত্রা করে রাশিয়া পাড়ি ।বিপদসংকুল পথে ভুলপথের যাত্রী হয়েছেন কখনও, বিপদ তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ।কিন্তু তিনি হেরে যাওয়ার পাত্র নন।তিনি জানালেন, এমনও দিন গেছে, আমি দিনে একবার খাবার খেয়েছি।জুতো ও  ব্যাগ ছিঁড়ে গেছে ।এমন কি টাকাও শেষ হয়ে গেছে ।কিন্তু আমি থেমে থাকিনি ।তবে ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে তার কোনও সমস্যা হয় নি।তিনি আরও জানালেন যে, আমি যে দেশে পৌঁছাতে, প্রথমে ভারতের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতাম ।তারাই আমাকে সাহায্য করত ভিসার জন্য ।

ব্যক্তিগত জীবনে অক্ষয় পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে গাইডের কাজে যুক্ত।ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে তার বিশ্বজয়ের পথে অগ্রগমন।এ ব্যাপারে নিজের জমানো টাকা কড়িও  যা ছিল তাও ফতুর।তবে তা তার কাজে লেগেছে ।বললেন, সাত মাস পরে রাশিয়া পৌঁছে ক্লান্তিবোধ করছি।কিছু দিন বিশ্রাম নিয়ে কাজাখাস্তান হয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা দেবো।

Advertisement