ISI agent Jyoti Malhotra

মহিলা ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রাকে জেরা করে উঠে এসেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য! তাঁর 'ব্যক্তিগত ডায়েরি'র পাতায় পাতায় রয়েছে রহস্যের ঘনঘটা!

জ্যোতির মোবাইল এবং তাঁর 'ব্যক্তিগত ডায়েরি' থেকে মিলেছে একাধিক পাকিস্তান কেন্দ্রিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

হরিয়ানার মহিলা ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রার জীবনের পরতে পরতে রয়েছে রহস্য! আর সেই রহস্যের জট একে একে খুলতে শুরু করেছে। ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রার সঙ্গে একাধিক পাক গুপ্তচর সংস্থার এজেন্টদের যোগাযোগ ছিল। জ্যোতি তাঁর নিজের ভ্লগের ভিডিও তৈরি করার জন্য একাধিকবার পাকিস্তান গিয়েছেন। এমনকি তিনি বিলাসবহুল জীবন যাপন করতেন, যদিও তিনি প্রথম জীবনে খুবই সাধারণ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ছিলেন বলেই জানা গেছে।

অত্যন্ত গরীব বাবার মেয়ে জ্যোতি মালহোত্রার বিলাসী জীবন!

বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত জ্যোতি মালহোত্রার বাবা হরিশ মালহোত্রা বলেছেন - তিনি ভীষণ গরীব। তাঁর উকিল রাখার পয়সা নেই। তাই তিনি সরকারি উকিল যাতে পান - তার আবেদন করেছেন সরকারের কাছে। এমনকি তিনি একটি ছোট্ট ফোন ব্যবহার করেন। স্বাভাবিকভাবেই গরীব বাবার মেয়ে হিসেবে জ্যোতি কিভাবে বিলাসবহুল জীবনযাপন করত? - সে নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তাঁর বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য কে বা কারা টাকার যোগান দিত? কিভাবে সেই টাকা জ্যোতির অ্যাকাউন্টে আসতো? আর কি জন্যইবা তাঁরা জ্যোতির অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতো? এই নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে - যার জট খোলার জন্য দফায় দফায় জ্যোতি মালহোত্রাকে জেরা করছেন তদন্তকারী অফিসাররা।

জ্যোতিকে জেরা করে উঠে এসেছে একাধিক চঞ্চল্যকর তথ্য!

জ্যোতি মালহোত্রার ইউটিউব চ্যানেলের নাম "ট্রাভেল উইথ জো" যার সাবস্ক্রাইবার (subscriber) এর সংখ্যা প্রায় চার লক্ষ, সেই মহিলা ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রাকে পাকিস্তানের গুপ্তচর সন্দেহে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জ্যোতিকে গ্রেফতার করার পর তাঁকে জেরা করে পাওয়া গেছে একাধিক চঞ্চল্যকর তথ্য। দফায় দফায় এনআইএ এবং আইবি এর তদন্তকারী অফিসাররা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এবং তদন্তকারী অফিসারদের চোখাচোখা প্রশ্নবানে একেবারে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে পাক গুপ্তচর সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়া মহিলা ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা।

প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে জ্যোতি মালহোত্রা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে,- পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের একজন অফিসার যার নাম আলী হাসান - তার সঙ্গে জ্যোতির প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল। এবং আই এস আই এর ওই অফিসার অর্থাৎ আলী হাসান-ই জ্যোতি মালহোত্রাকে পাকিস্তান ঘোরার এবং সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলো।

জেরায় জ্যোতি মালহোত্রার একাধিক চঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি!

জেরায় জ্যোতি মালহোত্রা জানিয়েছেন - ২০২৩ সালে জ্যোতি, পাকিস্তান যাওয়ার জন্য ভিসা তৈরি করতে গিয়েছিলেন দিল্লির পাক হাই কমিশনে এবং সেখানে গিয়ে দানিশ এর সঙ্গে জ্যোতি মালহোত্রার পরিচয় হয়। আর দানিশে এর সূত্রেই পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের অফিসার আলী হাসান এর সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। আর তারপরেই আলী হাসান তাকে পাকিস্তানে থাকা এবং ঘোরার জন্য ব্যবস্থা করে দেন। আর এভাবেই জ্যোতি মালহোত্রা বিলাসবহুল জীবন যাপন করতে শুরু করেন। একাধিক দেশে জ্যোতি বেড়াতে যান এবং সেখানে পাঁচতারা হোটেলে থাকা, বিলাসবহুল গাড়িতে ঘোরা অর্থাৎ তাঁর জীবন হঠাৎ করেই বৈভবে ভরে যায়।

পাক গুপ্তচরদের সঙ্গে কিভাবে যোগাযোগ রাখতো জ্যোতি?

এছাড়া তদন্তকারী অফিসারদের জেরায় উঠে এসেছে আরও একাধিক চঞ্চল্যকর তথ্য, জানা গেছে - জ্যোতির সঙ্গে একাধিক পাক নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেন আলী হাসান আর সেই সূত্রেই পরিচয় হয় শাকির এবং রানা শাহাবাজের সঙ্গে যারা আইএসআইয়ের এজেন্ট। এই সমস্ত আইএসআই এজেন্টের সঙ্গে জ্যোতি সোশ্যাল মিডিয়া অর্থাৎ স্ন্যাপচ্যাট, হোয়াটসঅ্যাপ (whatsapp), টেলিগ্রাম ইত্যাদি বিভিন্ন যোগাযোগের মাধ্যমগুলি ব্যবহার করে যোগাযোগ রাখত বলে জানা গেছে।

জ্যোতির ব্যক্তিগত ডায়েরি থেকে কি কি তথ্য মিলেছে?

তদন্তকারী অফিসাররা জ্যোতির মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেছেন এবং সেখান থেকে জানা গেছে যে, জ্যোতির ফোনে একাধিক স্পর্শকাতর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও রয়েছে। যেমন - জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখের সীমান্তবর্তী এলাকার বহু ভিডিও রয়েছে জ্যোতির মোবাইলে। সেই গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও গুলিতে মূলত ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর গতিবিধি, হাই সিকিউরিটি জোনের ছবি এবং রাডারের লোকেশন ইত্যাদি রয়েছে। জ্যোতির মোবাইল ছাড়াও জ্যোতির 'ব্যক্তিগত ডায়রি' মিলেছে।

সূত্র অনুযায়ী জানা গেছে যে, জ্যোতির নিয়মিত ডাইরি লেখার অভ্যাস ছিল। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ ডাইরি অর্থাৎ জ্যোতির ব্যক্তিগত ডায়েরি তদন্তকারী অফিসারদের হাতে এসেছে যেখানে জ্যোতি তাঁর সমস্ত ট্রাভেল রেকর্ড নোট করে রাখত এবং সেই ডায়েরি থেকে জ্যোতির ব্যক্তিগত ভাবনাচিন্তা সম্পর্কেও জানতে পেরেছেন তদন্তকারী অফিসাররা। 

জ্যোতির ব্যক্তিগত ডায়েরি থেকে মিলেছে পাকিস্তান কেন্দ্রিক একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

পাক-চর হরিয়ানার মহিলা ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রাকে ১৭ই মে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, তাঁর সঙ্গে সঙ্গে আরও সন্দেহভাজন ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যাঁদেরকে জেরা করে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারী অফিসাররা। 

জ্যোতি তাঁর ডাইরি - হিন্দি এবং ইংরেজি এই দুটি ভাষাতে লিখত। তাঁর সেই গুরুত্বপূর্ণ ডাইরির ১০-১১ টি পাতার মধ্যে প্রথম আটটি পাতা ইংরেজিতে লেখা। এবং পরবর্তী তিনটি পাতা হিন্দিতে লেখা। আর ওই তিনটি পাতাতেই মিলেছে পাকিস্তানেকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

Advertisement