Tripua
চিকিৎসায় গাফিলতিতে শিশুর মৃত্যু, উত্তাল ত্রিপুরা রাজ্যের বাইখোরা! কাঠগড়ায় ডাক্তার, কাঠগড়ায় গোটা স্বাস্থ্যকেন্দ্র
ত্রিপুরা রাজ্যের বাইখোরায় চিকিৎসকের চরম গাফিলতি আর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল দশার কারণে ৯ বছরের শিশুর মৃত্যু
যশপাল সিং, ত্রিপুরা : এক চিকিৎসকের চরম গাফিলতি আর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল দশার বলি হলো ৯ বছরের এক নিষ্পাপ শিশুকন্যা। বাইখোরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক রণদীপ ভৌমিকের বিরুদ্ধে ওঠা চিকিৎসায় বিলম্ব এবং ভুল সিদ্ধান্তের অভিযোগে অস্মি মজুমদার নামে এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গোটা চরকবাই এলাকা এখন ক্ষোভে ফুঁসছে।
ঘটনার সূত্রপাত রবিবার রাত আনুমানিক দশটায়। চরকবাই মধ্যপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জীব মজুমদারের মেয়ে অস্মিকে বিষাক্ত কিছু কামড়ানোর সন্দেহে বাইখোরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের অভিযোগ, সেই সময় জরুরি বিভাগে থাকা চিকিৎসক রণদীপ ভৌমিককে বিষয়টি জানানো হলে তিনি WBCT রক্ত পরীক্ষার নির্দেশ দেন, কিন্তু সেই পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থাই ওই হাসপাতালে ছিল না। পরিবারের সবচেয়ে বড় অভিযোগ, এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি না করে বা উচ্চতর কেন্দ্রে রেফার না করে, ডাক্তার ভৌমিক মাত্র তিনটি ইনজেকশন দিয়ে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর অস্মির শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে শুরু করে, তার শরীরের রঙ পাল্টাতে থাকে। আতঙ্কিত পরিবার তাকে পুনরায় বাইখোরা হাসপাতালে নিয়ে এলে, তখন তাকে শান্তিরবাজার জেলা হাসপাতালে রেফার করা হয়। শান্তিরবাজার জেলা হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষার পর নিশ্চিত হয় যে, শিশুটির শরীরে বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে চিকিৎসকরা অ্যান্টি-ভেনম দিয়ে দ্রুত তাকে জিবি হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। জিবি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ছোট্ট অস্মি।
এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বাইখোরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামগ্রিক অব্যবস্থা নিয়েও গর্জে উঠেছেন স্থানীয়রা। তাঁদের অভিযোগ, ডাঃ শুভ্রজ্যোতি মজুমদারের বদলির পর থেকেই এই হাসপাতালের অধঃপতন শুরু হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক রণদীপ ভৌমিক দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে হাসপাতালটি অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকে এবং নার্সরাও রোগীদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে বিলোনিয়ার সিএমও ডাঃ জ্যোতির্ময় দাসের বিরুদ্ধে। তাঁর সদর দপ্তর বিলোনিয়াতে হলেও, তিনি নাকি প্রাইভেট চেম্বার করার সুবিধার্থে বাইখোরা হাসপাতালের কোয়ার্টারেই থাকেন।
কিন্তু খোদ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের নাকের ডগায় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই বেহাল দশা কীভাবে চলতে পারে, সেই প্রশ্নই তুলছেন ক্ষুব্ধ জনতা। একটি নিষ্পাপ প্রাণের এই মর্মান্তিক পরিণতিতে চরকবাই এলাকা এখন শোকস্তব্ধ এবং ক্ষুব্ধ। তাঁদের একটাই দাবি—এই মৃত্যুর জন্য দায়ী চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অব্যবস্থার পিছনে থাকা সকলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে, অস্মির মতো আরও অনেককে হয়তো এই গাফিলতির শিকার হতে হবে।

Comments